Reason of Blood Sugar Spike

চিনি ছেড়েছেন, নিয়ম করে হাঁটেন, তবু শর্করার মাত্রা বাড়ছে? আসল কারণ এড়িয়ে যাচ্ছেন না তো?

শুধু খাবার নয়, অনেক বিষয় রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিকদের কোন বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ১৯:০৮
Share:

খাওয়া ঠিক থাকলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে? কোন কারণ থাকতে পারে নেপথ্যে? ছবি: সংগৃহীত।

ডায়াবিটিস হলে প্রথমেই মাথায় আসে খাবারের কথা। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রথমেই বাদ পড়ে চিনি। খাওয়া-দাওয়ায় নিয়মকানুন মানতে হয়। সঙ্গে দরকার হয় হাঁটহাঁটি, শরীরচর্চাও।

Advertisement

কিন্তু পরিমিত খাবার, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার পরেও কি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে? এমন অনেক ডায়াবিটিসের রোগী আছেন, যাঁদের দাবি ওষুধ খেয়ে, খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করেও রক্তে শর্করার মাত্রা বশে আসছে না।

ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি বলছেন, ‘‘শুধু খাওয়া নয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে মানসিক চাপ, অবসাদ, সংক্রমণ-সহ একাধিক বিষয়। রক্তে শর্করার মাত্রার সঙ্গে শরীরে একাধিক হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। হরমোনের মাত্রার হেরফের হলেই রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে কিংবা বেড়ে যেতে পারে।’’

Advertisement

মানসিক চাপ, উদ্বেগের সঙ্গে রক্তে শর্করার ওঠাপড়ার গুরুতর সংযোগ রয়েছে। মানসিক চাপ তৈরি হলেই কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করে। কর্টিসল অনেক সময় লিভারকে উদ্দীপিত করে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কখনও কখনও শর্করা নিয়ন্ত্রক ইনসুলিন হরমোনের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে দেয় ‘স্ট্রেস হরমোন’ বলে পরিচিত কর্টিসল। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। সেই কারণে মানসিক অশান্তির জেরে বা চাপ তৈরি হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। অভিজ্ঞান বলছেন, ‘‘শুধু দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ নয়, ঘুম না হলেও একই ভাবে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।’’

ঘুমোনো-জাগা এই চক্রটির সঙ্গে মেলাটোনিন, সেরোটোনিন, কর্টিসল-সহ একাধিক হরমোনের সম্পর্ক থাকে। ঘুম ঠিক না হলে, হরমোনের মাত্রাতেও হেরফের হয়। তার প্রভাবেই আচমকা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট প্রণব ঘোডী এক সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন, কোনও অসুখের জন্য সংক্রমণ হলেও শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। প্রদাহের সঙ্গে মোকাবিলায় হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। তার ফলেই এমনটা হয়।

এই কারণগুলি ছাড়াও মহিলাদের রজোনিবৃত্তির আগের বা পরের সময়টিও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে সাধারণত হরমোনের ওঠা-পড়া চলতে থাকে। শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, এমন হরমোনের ভারসাম্যের অভাব হলে, তার প্রভাব পড়ে ডায়াবিটিসের রোগীদের উপরেও। ওষুধ খেয়ে, শরীরচর্চা করেও কারও কারও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এমন সময়ে। ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরনের মতো হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এই সময়ে। ইনসুলিনের কর্মক্ষমতার সঙ্গে এই দুই হরমোন সম্পর্কিত। ফলে, রজোনিবৃত্তির সময়ে টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে?

চিকিৎসক অভিজ্ঞান বলছেন, ‘‘ডায়াবিটিস বশে রাখতে আমরা বার বার জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণের কথা বলি। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা হয়। এ জন্য দরকার হাঁটাহাটি, শরীরচর্চা, সঠিক ডায়েট, পর্যাপ্ত ঘুম। নিয়মিত প্রাণায়াম করলে কিছুটা হলেন মানসিক চাপ, অবসাদ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে। তবে যদি দীর্ঘ দিন ধরে ঘুমের সমস্যা হয়, অবসাদ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছয়, তা হলে সে সবের জন্যও চিকিৎসা দরকার।’’

চিকিৎসক প্রণব ঘোডীর কথায়, দেখতে হবে যেন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতি দিন ৭-৮ ঘণ্টা ভাল করে ঘুম হয়। হরমোনের মাত্রা ঠিক থাকলেই শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement