ফলের বাজারে উঁকি দিচ্ছে পার্সিমনও। খেয়ে দেখতে পারেন। গুণের বহর অবাক করবে। ছবি: সংগৃহীত।
এক নজরে দেখলে মনে হবে, কমলা রঙের টম্যাটো। হাতে নিলে বোঝা যাবে, ঠিক চেনা ফলের তালিকায় পড়ে না সেটি। এমন ফল নিয়ে ক্রেতামহলে আগ্রহ বাড়ছে। কলকাতা থেকে শহরতলির বাজারে এখন মিলছে পার্সিমন।
রসালো, তবে আম, লিচুর মতো সুমিষ্ট নয়। আবার টম্যাটোর মতো টক ভাবও নেই এতে। পুরো পেকে গেলে কিছুটা নরম। আবার হালকা কাঁচা-পাকা অবস্থায় ঈষৎ শক্ত। স্বাদে একটা মিষ্টি ভাব রয়েছে।
এক সময় বিদেশি ফলের তালিকায় থাকা পার্সিমন নিয়েই ক্রেতাদের উৎসাহ বাড়ছে। নতুন ফল বলেই, অনেকে চেখে দেখতে চাইছেন এর স্বাদ। এই ফলের আসল দেশ চিন-জাপান। তবে ইদানীং হিমাচল প্রদেশ, কাশ্মীরেও অল্প করে পার্সিমনের চাষ শুরু হয়েছে। ফলে বাজারে ফলটির তুলনামূলক ভাবে সংখ্যাও বেড়েছে, দামও এসে গিয়েছে আয়ত্তেে মধ্যে।
ফলটি শীতের কমলালেবু-সহ চেনা অনেক ফলকেই পুষ্টিগুণে টেক্কা দিতে পারে। ১০০ গ্রাম পার্সিমন থেকে মোটামুটি শক্তি মেলে ৬৯-৭০ কিলোক্যালরি। জল থাকে প্রায় ৮১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৭ - ১৮ গ্রাম, শর্করা প্রায় ১২.৫ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার প্রায় ৩.৬-৪.০ গ্রাম, প্রোটিন প্রায় ০.৬-০.৮ গ্রাম, ফ্যাট প্রায় ০.২-০.৩ গ্রাম, পটাশিয়াম প্রায় ১৯০-২৭০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি প্রায় ৭.৫-১২.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ প্রায় ৮১ মাইক্রোগ্রাম, বিটা-ক্যারোটিন প্রায় ১৬০-১৮০ মাইক্রোগ্রাম।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
পার্সিমনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলের প্রজাতির উপর ভিটামিনের মাত্রা হেরফের হয়। শীতকালে মরসুম বদলের সময় অসুখ-বিসুখ হয়। ভিটামিন সি থাকার জন্য ফলটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সক্ষম। তা ছাড়া ভিটামিন সি ত্বক ভাল রাখতেও সাহায্য করে। এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস, পলিফেনলসের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে শরীর বাঁচাতে সাহায্য করে।
চোখের জন্য ভাল
চোখ ভাল রাখার জন্য দরকার হয় ভিটামিন এ। সেটিও যথেষ্ট মাত্রায় মেলে ফলটিতে। এতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড। অকালবার্ধক্য ঠেকাতেও ফলটি ভীষণ উপকারী। ক্যারোটিনয়েড অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বা ক্ষতির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। বলিরেখা ঠেকায়। ত্বক টানটান রাখে।
ডায়াবেটিকদের জন্য ভাল কি?
পার্সিমনে এ-অ্যামাইলেজ় নামে একটি উপাগদান মেলে, যা রক্তে শর্করা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে বেশ ভাল পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার থাকে। ফাইবার খাবারের শর্করা দ্রুত রক্তে মিশতে বাধা দেয়। তা ছাড়া ভিটামিন এ, সি-র মতো ভিটামিনের পুষ্টিগুণ মেলে এতে। ফলে ডায়াবেটিকেরা এই ফল খেতেই পারেন। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, বেশি নয়, পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই হতে পারে সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়!
পার্সিমনে মেলে ক্যাটেকাইন, ক্যারোটিনয়েড, যা পরোক্ষে টিউমার হওয়ার প্রবণতা আটকে ক্যানসারের ঝুকি কমায়। এ বিষয়ে কিছু কিছু প্রাণীর উপর পরীক্ষা হয়েছে। তবে নিশ্চিত কোনও গবেষণালব্ধ ফল এখনও প্রকাশ পায়নি।
হার্ট ভাল রাখে
ভিটামিন, খনিজে ভরপুর ফলটি লিপিড-প্রোফাইলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। একাধিক গবেষণায় তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। ফলটিতে থাকা ট্যানিন হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে পার্সিমন, বাড়ায় ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা।
পার্সিমন মূলত শীতের শুরুর সময়ের ফল। হালকা মিষ্টি স্বাদের ফলটি ডায়েটে রাখতেই বলছেন পুষ্টিবিদেরা। তবে উপকারী হলেও, তা খেতে বলছেন পরিমিত পরিমাণে। খোসা সহ বা খোসা ছাড়া দুই ভাবেই এই ফল খাওয়া চলে। তবে অম্বলের ধাত থাকলে বা হজমে সমস্যা হলে পার্সিমন এড়িয়ে যাওয়া ভাল।