শুকনো কাশি সারছেই না, কারণটা আসলে কী? ছবি: ফ্রিপিক।
ঠান্ডা লাগেনি। গায়ে জ্বরও নেই। তার পরেও শুকনো কাশি সারতে চাইছে না। ইদানীং এমন সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন। মরসুম বদলের সময়ে কাশি হয় অনেকেরই। কিন্তু এই সমস্যা যদি বছরভর থেকে যায়, তা হলে মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। ওষুধ, সিরাপ, টোটকা, অ্যান্টিবায়োটিক, গার্গল, ভেপার কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। রাত যত বাড়ছে, ততই চড়ছে কাশির মাত্রা। রোগ সারছে কই!
একটানা কাশি, গলা ব্যথা, গলার স্বরের আচমকা বদল হলে শুধু কাশির সিরাপ খেয়ে তা সারবে না। কাশি কেন হচ্ছে, তার কারণ জানা খুব জরুরি। একটানা তিন সপ্তাহের বেশি শুকনো কাশি যদি ভোগায়, তা হলে সতর্ক হতে হবে। মনে রাখতে হবে, কাশি নিজে কোনও রোগ নয়। রোগের লক্ষণ মাত্র। কাশিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী কাশিকে বলা হয় অ্যাকিউট কাশি। তিন থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত কাশি স্থায়ী হলে সেটি তখন সাব-অ্যাকিউট। আর আট সপ্তাহের বেশি কাশি হলে তা হয়ে যায় ক্রনিক।
কেন হচ্ছে এত কাশি?
শুকনো কাশির কারণ অনেক। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে, টিবি বা টিউবারকিউলোসিসের প্রাথমিক পর্যায়ে কাশির মাত্রা বাড়ে। তা ছাড়া গলা ও শ্বাসনালির রোগ ল্যারেঞ্জাইটিস, ফ্যারেঞ্জাইটিস হলেও কাশি হতে পারে। মূলত শ্বাসনালী বা ফুসফুসে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে কাশি হতে থাকে। সর্ব ক্ষণ কাশতে থাকেন রোগী। রাতের দিকে কাশির তীব্রতা বাড়ে।
শ্বাসনালির ভিতরে টিউমার হলেও কাশি হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে।
অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিসের কারণে কাশি হতে পারে। ‘ইউরোপিয়ান রেসপিরেটারি সোসাইটি’-র গবেষণা বলছে, প্রশ্বাসের সঙ্গে শুধু অক্সিজেন বা নাইট্রোজেন শরীরে প্রবেশ করে না। জীবাণু, বাতাসের নানা ধরনের দূষিত পদার্থও শরীরের ভিতরে বাসা বাঁধে। এই দূষিত পদার্থগুলি ব্রঙ্কাসের মিউকাস মেমব্রেন বা ঝিল্লিতে প্রদাহ তৈরি করে। তখন একটানা কাশি হতে পারে। হাঁপানি বা সিওপিডি-ও এর মধ্যে পড়ছে। গলা ধরে থাকা, গলায় কিছু আটকে থাকার অস্বস্তিকর অনুভূতি, রাতে শুলেই কাশি এর লক্ষণ।
আরও একটা কারণে শুকনো কাশি ভোগাতে পারে, তা হল ফুসফুসের ক্যানসার। সব ক্ষেত্রেই যে কাশি মানে ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ, তা নয়। তবে শুকনো কাশি যদি টানা আট সপ্তাহ ধরে সারতেই না চায়, তা হলে বুঝতে হবে ফুসফুসের কোনও জটিল রোগ হয়েছে। এবং তা ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে।
কখন বুঝবেন, চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
ধূমপানের নেশা থাকলে এবং শুকনো কাশি বছরভর ভোগালে, ফেলে রাখা ঠিক হবে না।
কাশির সঙ্গে গলা ব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট বা ঢোক গিলতে সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
রাতে শুয়ে আচমকা কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলার স্বরে বদল হলে দেরি করা ঠিক হবে না। বুকের এক্স-রে এবং স্পাইরোমেট্রি পরীক্ষায় কাশির কারণ ধরা পড়তে পারে। যাঁদের অ্যালার্জির ধাত, তাঁদের ধুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। রোদে বা গরমে শরীর ঘেমে গেলেও বাতানুকূল ঘরে বেশি ক্ষণ থাকবেন না। ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করুন। খুব সকালে বা রাতে স্নান না করাই ভাল। যাঁদের ঠান্ডার ধাত রয়েছে, তাঁরা ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে পারেন। তাতেও কিছুটা সুরক্ষিত থাকা যায়।