বাজির ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের উপায় জেনে নিন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাগুলির বাতাস এমনিতেই দূষিত। তার উপরে বাজির ধোঁয়ায় দূষণের ঘনত্ব কয়েক গুণ বেড়ে যাবে কালীপুজোর রাতে। বাজির ধোঁয়া নাকে গেলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির টান, কাশি-সহ ফুসফুসের অসুখের প্রবণতা আরও বাড়বে। সিওপিডির রোগীদের এই সময়টাতে কষ্ট খুব বাড়ে। বাজির ধোঁয়ার সঙ্গে বাতাসে ভাসমান দূষিত পদার্থ শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকলেই শ্বাসকষ্ট কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই কালীপুজোর আনন্দে সামিল হোন, কিন্তু সতর্কও থাকুন।
বিভিন্ন আতসবাজিতে কপার আর বেরিয়াম ছাড়াও যে সব যৌগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলিও বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। ক্যাডমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ়, জ়িঙ্ক, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম-সহ নানান ভারী যৌগ আর সালফারের যৌগ ফুসফুসের সূক্ষ্ম কোষগুলির ক্ষতি করে। ফলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ শুরু হয়। বাজির ধোঁয়া থেকে নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড নির্গত হয়। বিশেষ করে নাইট্রিক অক্সাইড শ্বাসনালীর প্রদাহ বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হাঁপানি-সহ সব ধরনের ফুসফুসের অসুখ বাড়িয়ে দেয়। বাজির ধোঁয়ার সব থেকে ক্ষতিকর উপাদান হল কার্বন মনোক্সাইড। এটি চট করে হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে মিশে গিয়ে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। ফলে অসুস্থতা বেড়ে যায়। সিসা বা লেড থেকেও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফুসফুস বাঁচাবেন কী ভাবে?
১) সিওপিডির ক্ষেত্রে ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা প্রাণায়াম বেশ উপকারী। সুখাসনে বসে নাক দিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস টেনে ১০ সেকেন্ড মতো ধরে রাখার চেষ্টা করুন। তার পর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাসকষ্ট আচমকা শুরু হলে, এই ভাবে শ্বাসের ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তাতে কষ্ট কম হবে।
২) বাজি পুড়ছে যেখানে, সেখানে না যাওয়াই ভাল। দরজা-জানলা ভাল করে বন্ধ রাখুন। মুখে মাস্ক পরে থাকলে সবচেয়ে ভাল হয়।
৩) বাজির ধোঁয়া নাকে গিয়ে কষ্ট হলে অল্প ভিজে কাপড় নিয়ে নাক চেপে রাখতে পারেন। এতে অনেকটা আরাম হবে।
৪) হাঁপানি বা সিওপিডি থাকলে প্রয়োজনীয় ইনহেলার হাতের কাছেই রাখতে হবে। দরকারে তা যেন দ্রুত ব্যবহার করতে পারেন। ওষুধপত্রও ঘরে মজুত করে রাখতে হবে।
৫) বিড়ি–সিগারেট থেকে দূরে থাকুন। প্যাসিভ স্মোকিংও চলবে না, আশপাশে কেউ ধূমপান করলে সেই স্থান থেকে সরে আসুন, নয়তো নাকে চাপা দিন।
৬) সম্ভব হলে হেপা ফিল্টারযুক্ত এয়ার পিউরিফায়ার ঘরে রাখতে পারেন, এতে ঘরের বাতাস অনেকটাই পরিশোধিত হবে।
৭) সিওপিডি বা হাঁপানির রোগী বাড়িতে থাকলে তাঁর ঘরে প্রদীপ, মোমবাতি বা ধূপকাঠি জ্বালাবেন না। এই সবের ধোঁয়াও ঘরের অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে।
৮) ইনহেলার বা নেবুলাইজ়ার ব্যবহারের পরেও শ্বাসকষ্ট না কমলে, বুক ধড়ফড় করলে বা ঠোঁট নীল হতে শুরু করলে, দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে।