না ঘুমিয়ে কোন রোগ ডেকে আনছেন? ছবি : সংগৃহীত।
বয়স যতই হোক— ২৫ কিংবা ৫০, রাতে চার ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোলে আপনি মারণ রোগকে নিমন্ত্রণ করে ডেকে আনছেন শরীরে! এমনই বলছে এক গবেষণা। কারণ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, টানা তিন দিন যদি কেউ চার ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোন, তবে তাঁর রক্তে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যা শরীরে জটিল রোগের পথ প্রশস্ত করে! যে রোগ শুধু বয়স্ক নয়, হানা দিতে পারে কমবয়সিদের শরীরেও।
রাতের ঘুম কম হওয়ার সমস্যায় ভোগেন এ যুগের অধিকাংশ পেশাদারেরাই। অফিসের কাজ বাড়িতেও নিয়ে আসার অভ্যাস যাঁদের বা যাঁরা রাত করে বাড়ি ফিরে আবার সকাল হতেই অফিস যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন কিংবা যাঁরা রাত জেগে সিনেমা দেখে বা সমাজমাধ্যমের পাতায় নজর রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন, তাঁদের রাতে অনেক সময়েই পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। কিন্তু বিষয়টি যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখনই ঘনায় সমস্যা।
রাতে ৪ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোলে রক্তে এক ধরনের প্রদাহ ঘটানো প্রোটিনের জন্ম হয়। ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞানীরা আগেই বলেছেন, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে হৃদ্রোগের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সম্প্রতি একটি গবেষণায় তারা জেনেছেন, ওই রোগ কী ভাবে শরীরে বাসা বাঁধে আর কারাই বা আক্রান্ত হন তাতে!
সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, টানা তিন দিন রাতে ৪ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোলে রক্তে এক ধরনের প্রদাহ ঘটানো প্রোটিনের জন্ম হয়। ওই প্রোটিন শরীরে তখন তৈরি হয়, যখন কেউ মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন বা যখন শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ওই প্রোটিন দীর্ঘ দিন ধরে রক্তে থাকলে তা ধমনীর ক্ষতি করে এবং হার্টফেল, হার্টের অসুখ এবং অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যা তৈরি করে, যা পরিস্থিতিবিশেষে মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১৬ জন সুস্থ কমবয়সি পুরুষকে গবেষণাগারে রেখে এ ব্যাপারে সমীক্ষা চালান। অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের সারা দিনের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে শরীরচর্চা, কাজকর্ম, এমনকি, তাঁদের গায়ে সূর্যের আলো লাগানোর সময়ও ঠিক করা হয় স্বাস্থ্যকর নিয়ম মেনে। শুধু ঘুমের সময় মাঝেমধ্যে বদলে দেওয়া হয় নিয়ম। কখনও টানা তিন দিন অংশগ্রহণকারীদের সাড়ে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমোতে দেওয়া হয়। আবার কখনও টানা তিন দিন সওয়া ৪ ঘণ্টা ঘুমোনোর পরেই ডেকে দেওয়া হয়। এর পরে করানো হয় রক্ত পরীক্ষা। তাতেই ধরা পড়ে ওই বিশেষ প্রোটিনের উপস্থিতি।
তথাকথিত কমবয়সি সুস্থ-সবলদের শরীরেও একই ভাবে ক্ষতি করছে কম ঘুমোনোর অভ্যাস। ছবি : সংগৃহীত।
শুধু তা-ই নয়, আরও একটি উদ্বেগজনক বিষয় খেয়াল করেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘সচরাচর শরীরচর্চা করলে শরীরে স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে। যা মস্তিষ্ক এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায়, যাঁরা কম ঘুমিয়েছেন, তাঁরা শরীরচর্চা করলেও সেই প্রোটিনের মাত্রা বাড়ছে না।’’
বিষয়টি চিন্তার বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। কারণ এই সমস্যা তথাকথিত কমবয়সি সুস্থ-সবলদের শরীরেও একই ভাবে ক্ষতি করছে, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাকিদের থেকে ভাল বলেই মনে করা হয়।