Ancient Gene help fight Gout

২ কোটি বছরের বিলুপ্তপ্রায় জিন নির্মূল করবে ফ্যাটি লিভার, গেঁটে বাত, পুনরুজ্জীবিত করছেন বিজ্ঞানীরা

জিন খোঁজার চেষ্টা ব্যর্থ হলে, তাকে পুনরুজ্জীবিত করার কৌশলও আয়ত্ত করছেন গবেষকেরা। এই গবেষণাকে স্মীকৃতি দিয়েছে ‘সায়েন্স রিপোর্ট’-এর মতো বিজ্ঞান-জার্নাল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৩১
Share:

বিলুপ্ত জিনেই আছে বিশল্যকরণী। ছবি: ফ্রিপিক।

লড়াইটা যখন রোগ নির্মূল বনাম সময়ের, তখন তা কঠিন তো হবেই। কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে যে জিন, তাকেই ফিরিয়ে আনার মরিয়া চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের শরীরে সে জিন আজ বিলুপ্ত। টিকে আছে কিছু প্রাণীর শরীরে। কিন্তু সে জিনেই রয়েছে ‘জিয়ন কাঠি’। ইউরিক অ্যাসিড, ফ্যাটি লিভার, গেঁটে বাতের মতো ব্যধিকে চিরতরে নির্মূল করে ফেলার মহৌষধ। জিন খোঁজার চেষ্টা ব্যর্থ হলে, তাকে পুনরুজ্জীবিত করার কৌশলও আয়ত্ত করছেন গবেষকেরা। এই গবেষণাকে স্মীকৃতি দিয়েছে ‘সায়েন্স রিপোর্ট’-এর মতো বিজ্ঞান-জার্নাল।

Advertisement

আমেরিকার আটলান্টার জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা বিলুপ্তপ্রায় এক জিনকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। জিনের নাম ‘ইউরিকেস’। আজ থেকে প্রায় ২ কোটি বছর আগে জিনটির অস্তিত্ব ছিল। ধীরে ধীরে মানুষের শরীর থেকেও বিলুপ্ত হয়ে যায় সেটি। এই জিনের কাজ ছিল রক্তে জমা ইউরিক অ্যাসিডকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলা। খুব বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার, মাছ-মাংস, ডিম খেলে বা ওজন বাড়লে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড অস্থিসন্ধি ও মূত্রনালিতে গিয়ে থিতিয়ে পড়ে। থিতিয়ে পড়া ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টালের আকার নেয়। এটি গাঁটে ব্যথা ও প্রস্রাবের সংক্রমণ ডেকে আনে। এ ছাড়া কিডনিতে পাথরও জমতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে 'হাইপারইউরিসেমিয়া'। ‘ইউরিকেস’ জিনটি এই ক্রিস্টাল তৈরিতেই বাধা দিতে পারে। ফলে ইউরিক অ্যাসিড রক্তে জমা হওয়ার সুযোগই পায় না। কিন্তু কালের বিবর্তনে জিনটি মানুষের শরীর থেকে একেবারেই হারিয়ে গিয়েছে।

জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক এরিক গাউচার বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, কিছু প্রাণীর শরীরে জিনটি টিকে আছে। সেখান থেকে নিয়ে যদি মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়, তা হলে সেটি কী ভাবে কাজ করবে, তা দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, জিনটিকে বাঁচিয়ে তুলতে ‘ক্রিসপার জিন এডিটিং’ পদ্ধতির সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালে ক্রিসপার পদ্ধতির কথা জানান লন্ডনের বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণা নিয়ে কাজ করে চলেছে বিশ্বের একাধিক দেশ। জিন থেকে রোগ সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিটি হল ক্রিসপার জিন এডিটিং। এটি অনেকটা কাঁচির মতো। ক্যাস ৯ নামক এক ধরনের এনজ়াইম ব্যবহার করে আরএনএ-র সাহায্যে ডিএনএ-র নির্দিষ্ট অংশ কাটা বা পরিবর্তন করা যায়। ক্রিসপার জিন এডিটিং নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়েই। জিনগত রোগ নির্মূল করা, ক্ষতিগ্রস্ত জিনের অংশ সারিয়ে তোলা বা নতুন জিন যোগ করার জন্য এই পদ্ধতিকেই কাজে লাগানো হচ্ছে।

Advertisement

গবেষক এরিক জানিয়েছেন, ক্রিসপার পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে হারিয়ে যাওয়া ওই ‘ইউরিকেস’ জিনকে জোড়াতালি দিয়েই বানানো হয়েছে গবেষণাগারে। তার পর সেটি মানুষের লিভারে প্রতিস্থাপন করে দেখা গিয়েছে, জিনটি বিশল্যকরণার মতো কাজ করছে। ইউরিক অ্যাসিড তো নির্মূল করছেই, ফ্যাটি লিভারও সারিয়ে তুলছে। জিনটির কারণে লিভারে আর মেদ জমার অবকাশই ঘটছে না। রক্তে অতিরিক্ত শর্করাও নিয়ন্ত্রণে থাকছে। তবে এর অন্য সমস্যাও আছে। জিন যেহেতু তৈরি করে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে, তাই এর ক্ষমতা সীমিত। বেশি দিন তার দাপট চলবে না। তাই পাকাপাকি ভাবে রোগ সারাতে হলে, জিনটিকে মানুষের শরীরে বাঁচিয়ে তুলতেই হবে। সে পথ জটিল ও সময়সাপেক্ষ হলেও, চেষ্টার ত্রুটি করছেন না বিজ্ঞানীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement