সন্ধ্যায় শিঙাড়া-চপ খেলে কী রোগ হতে পারে? ছবি: এআই।
সন্ধ্যা হলে চপ-শিঙাড়া খেতেই মন চায়। সারা দিন অফিসের কাজের চাপে হিমশিম খেয়ে সন্ধ্যাবেলার ছোট্ট বিরতিতে চায়ের সঙ্গে ভাজাভুজিই বেশ লাগে। কখনও চপ-শিঙাড়া, আবার কখনও অর্ডার দিয়ে পিৎজ়া-বার্গার প্রায়শই খাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে যদি ভাজাভুজি বা তেলমশলা দেওয়া খাবার বেশি খাওয়া হয়, তা হলে লিভারের বারোটা বেজে যাবে। যে রোগ হবে তার নাম ‘জিইআরডি’, অর্থাৎ ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজ়িজ়’ । এতে অম্বল, গলা-বুকজ্বালার সমস্যা ক্রনিক হয়ে যাব। শুধু তা-ই নয়, ডুবো তেলে ভাজা খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাটের কারণে স্থূলত্ব বেড়ে যাব।
সন্ধ্যাবেলা শিঙাড়া বা চপের মতো খাবার খেলে হার্টের সমস্যাও হতে পারে। এই নিয়ে একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে। সেখানে গবেষকেরা লিখেছেন, সপ্তাহে যদি কেউ ১৫০ গ্রামের মতো ভাজা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খান, তা হলেও হার্টের রোগের ঝুঁকি ৩ শতাংশ বাড়ব। আর যদি রোজ সন্ধ্যার পরে ভাজা খাবার খেতে থাকেন, তা হলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা এতটাই বাড়বে যাবে যে, তার থেকে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যাব। দোকানে ডুবো তেলে যে শিঙাড়া বা চপ ভাজা হয়, তাতে ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে। একই তেল বার বার ব্যবহার করা হয় যা শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক। দীর্ঘ দিন ধরে এমন খাবার খেলে আলসার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়বে।
সন্ধ্যার পরে হজমপক্রিয়া ধীর গতিতে হয়। ওই সময়ে ভারী খাবার খেলে তা পাকস্থলী ঠিকমতো হজম করতে পারে না। পাকস্থলীতে খাবার ছোট ছোট টুকরো হয়ে কিছু পরিমাণ আত্তীকরণ হয়, বাকিটা পৌঁছোয় ক্ষুদ্রান্ত্রে। এই ছোট ছোট টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটা ব্যাহত হলেই পাকস্থলীর পুরো প্রক্রিয়া নষ্ট হতে শুরু করে। তখনই শুরু হয় পেট ফোলা, বমি-বমি ভাব ইত্যাদি। সন্ধ্যার পর ট্রান্স ফ্যাট রয়েছে, এমন খাবার খেলে এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অম্বলের সমস্যা বাড়তে থাকে।
ভাজাভুজির বদলে কী খাবেন?
১) কর্ন চাট খেতে পারেন। ভুট্টার দানা ছাড়িয়ে সামান্য নুন দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। আবার একটি পাত্রে সিদ্ধ ভুট্টা, সামান্য মাখন, স্বাদমতো নুন, লঙ্কার গুঁড়ো, চাটমশলা, গোলমরিচ আর লেবুর রস দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে কর্ন চাট।
২) মুখরোচক কিছু খেতে ইচ্ছে হলে মশলা মাখানা খেতে পারেন। সামান্য ঘি নিয়ে তাতে মাখানা কড়া করে ভেজে চাটমশলা, গোলমরিচ, লঙ্কারগুঁড়ো ভাল করে মিশিয়ে মাখানা খেতেই পারেন। সন্ধ্যার চায়ের সঙ্গে এ রকম স্ন্যাক্স বেশ ভালই জমবে।
৩) আখরোট, কাঠবাদামের মতো কিছু ড্রাই ফ্রুটস কিনে রাখুন। তাতে সাধারণ বাদামের তুলনায় অন্য রকম স্বাদ পাওয়া যাবে। সঙ্গে পেস্তা, খেজুরের মতো শুকনো খাবার হাতের কাছে রাখতে পারেন। আবার ছোলা, বাদাম মিশিয়ে উপরে কাঁচালঙ্কা কুচি, ধনেপাতা কুচি আর লেবুর রস ছড়িয়ে নিলে তা খুবই মুখরোচক একটি স্ন্যাক্স হবে।