কোন মাশরুম ক্যানসার নির্মূল করছে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এর দেখা সহজে মেলে না। তাইওয়ানের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় বছরের বিশেষ সময়ে জন্মায়। তবে এশিয়ার আরও কিছু এলাকায় এই ছত্রাকের দেখা মেলে। এমন এক ছত্রাক যার ক্যানসার কোষ ধ্বংস করার বিশেষ গুণ রয়েছে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। ছত্রাকের কিছু উপাদান ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমার কোষ ছিঁড়েখুঁড়ে দিতে পারে। ক্যানসারের বাড়বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে অবলীলায়। ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি এবং ন্যাশনাল ইয়াং মিং চিয়াও তুং ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ছত্রাকটির খোঁজ পেয়েছেন।
মারণ রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে, এমন কিছু ছত্রাক নিয়ে গবেষণা আগেও হয়েছে। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা গাছ, অণুজীব এবং মাশরুম থেকে ক্যানসাররোধী উপাদান খোঁজার মরিয়া চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের নানা দেশেই চলছে এমন গবেষণা। তবে এই ছত্রাকটি বিরল প্রজাতির বলেই জানা গিয়েছে। এর নাম ‘অ্যান্ট্রোডিয়া সিনামোমিয়া’। তাইওয়ানের গবেষকেরা নাম দিয়েছেন ‘তাইওয়ান মাশরুম’। এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা অন্যান্য ছত্রাকে নেই।
অ্যান্ট্রোডিয়া সিনামোমিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় উপাদান হল ট্রাইটারপেনয়েডস। এর কাজ হল ক্যানসার কোষের মৃত্যু ঘটানো। এই পক্রিয়াকে বলে ‘অ্যাপোপটোসিস’। অর্থাৎ, কোষের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটানো। সুস্থ কোষের যেমন মৃত্যু হয় এবং সে জায়গায় নতুন কোষের জন্ম হয়, ক্যানসার হলে তা হয় না। ক্যানসার কোষের মৃত্যু নেই, তারা সংখ্যায় বেড়েই চলে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, শরীরের মধ্যেই কিন্তু ক্যানসাররোধী জিন থাকে, তাদের সক্রিয় করে তোলাই ওই উপাদানের কাজ।
এই ছত্রাকে থাকা আরও একটি উপাদান হল সালফেট পলিস্যাকারাইড। এর মধ্যে গ্লুকোজ়, গ্যালাক্টোজ় ও সালফেট— তিনটি উপাদানই একসঙ্গে থাকে। এর কাজ হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং ক্যানসার কোষগুলিকে ধরে ধরে ধ্বংস করা। ক্যানসার হলে শরীরের ভিতরে যে ভয়ানক প্রদাহ শুরু হয়, তা প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে এই উপাদান। ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষক চিয়া-চুয়ান চ্যাং জানিয়েছেন, তাইওয়ান মাশরুমে আরও একটি জিনিসের দেখা মিলেছে তা হল, ‘এন৫০ এফ২’। ক্যানসার কোষের বিভাজন বন্ধ করতে এই উপাদানটি কার্যকরী হতে পারে।
ছত্রাকের নির্যাস বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে পরীক্ষা করে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে মানুষের শরীরে এখনও এর প্রয়োগ হয়নি। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ছত্রাকটি নিরাপদ মনে হলে মানুষের উপরেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। ক্যানসার রোগীদের উপর প্রয়োগ করলে এর কার্যকারিতা কত দূর, তা বোঝা যাবে।