রোগা হতে ২ বার খাবেন, না কি ৬ বার? ছবি: ফ্রিপিক।
ওজন কমাতে গেলে কেমন ভাবে খাওয়াদাওয়া করা উচিত, তা নিয়েই চর্চা সর্বত্র। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদেরা নানা রকম মতামত দিচ্ছেন। কারও মতে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অর্থাৎ, দিনের একটা বড় সময়ে উপোস করে থাকলে তাড়াতাড়ি ওজন কমবে, আবার কেউ কেউ সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাতের খাওয়া নিয়ম মেনে করারই পরামর্শ দিচ্ছেন। ওজন কমানো শুধু তো নয়, সামগ্রিক ভাবে শরীর ভাল রাখতে পরিমিত আহারেরই পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে শুধু পরিমিত খেলেই হবে না, কখন খাচ্ছেন ও কত বার, তা-ও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমানো, হার্ট ভাল রাখা ও সেই সঙ্গে শরীর চনমনে রাখতে গেলে দিনে দু’বার খাওয়া ভাল, না কি ছোট ছোট ৬টি মিল খেলে উপকার বেশি হবে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কাদের জন্য কোনটি ভাল, তা জেনে নিন।
দিনে দু’বার না ছ’বার, কতবার খাবেন?
ডায়েট শরীর বুঝেই করা উচিত। পুষ্টিবিদেরা আগে বলতেন, এক বারে পাত পেড়ে বসে না খেয়ে বরং সারা দিনে অল্প অল্প করে পাঁচবার বা ছ’বার খেলে হজম যেমন ভাল হবে, তেমনই তাড়াতাড়ি ওজনও কমবে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থেকে তার পর থালা সাজিয়ে পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে খাওয়াটা কাজের কথা নয়। তবে এখন আবার নানা গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, অত বার খেতে থাকলে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে উল্টে ক্ষতি হবে। তার চেয়ে দিনে দু’বার মেপেজুপে খাওয়াই ভাল। ওই দু’বারের মিলে যেন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমপরিমাণে থাকে।
স্বাভাবিক ভাবে এই দু’বার ও ছ’বারের খাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কোনটি ভাল ও কাদের জন্য ভাল, তা নিয়ে ইন্টারনেটে বিস্তর খোঁজাখুঁজিও হচ্ছে। দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, হার্ট যদি ভাল রাখতে হয় ও ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমাতে হয়, তা হলে দিনে দু’বার খাওয়াই শ্রেয়। যত বার খাবেন, তত বারই ইনসুলিন হরমোন নির্গত হবে। এই ইনসুলিনের কাজ হল শরীরে জমা খাবার, গ্লুকোজ় ভেঙে তা থেকে শক্তি তৈরি করা। যদি দিনে পাঁচ বার বা ছ’বার খান, তা হলে তত বারই ইনসুলিন বার হবে। আর প্রতি বার তা শরীরে জমতে থাকবে এবং আরও বেশি গ্লুকোজ় জমা করে রাখবে। ফলে রক্তে শর্করা যেমন বাড়বে, তেমনই মেদবৃদ্ধিও হতে থাকবে। ছ’টি মিল যদি খুব পরিমিত মাত্রায় থাকে, তা হলে ভয় কম। কিন্তু পরিমিতিবোধ সকলের নেই। সে ক্ষেত্রে বেশি খাওয়া হয়ে যেতেই পারে। এতে ক্যালোরির মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। হজমশক্তি কমবে ও চাপ পড়বে হার্টে। অন্য দিকে, দিনে দু’বার যদি মাপমতো খাওয়া যায়, তা হলে ইনসুলিন কম ক্ষরিত হবে, মেদবৃদ্ধির সম্ভাবনা কমবে।
কারা কোনটি খাবেন?
দিনে দু’বার খাওয়া ভাল না ছ’বার, এ নিয়ে নানা মতও রয়েছে। ‘আমেরিকান হার্ট অ্য়াসোসিয়েশন’-এর তথ্য বলছে, যাঁরা ভারী ব্যায়াম করেন, কার্ডিয়ো বা স্ট্রেংথ ট্রেনিং করছেন অথবা খেলোয়াড়দের দিনে ৬টি মিল খাওয়াই যুক্তিযুক্ত। কারণ তাঁদের যে ক্যালোরির ঘাটতি হয়, তা মেটাতে অল্প অল্প করে বারে বারে খেতেই হবে। তবে যাঁদের হার্টের রোগ আছে, ডায়াবিটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে অথবা ওজন খুব বেশি ও কায়িক পরিশ্রম কম, তাঁদের জন্য দিনে দু’টি বা তিনটি মিলই ভাল। এতে ক্যালোরির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সারা দিনে দু’বার বা তিন বার খেতে হলে এমন খাবার পাতে রাখতে হবে, যাতে বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমে। এর জন্য বেশি করে সবুজ সব্জি, ফল, ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রোটিন রাখতেই হবে ডায়েটে। মাছ, মাংস, ডিম বা সয়াবিন, ছানা, পনির খেলে প্রোটিনের ঘাটতি মিটবে, বার বার স্ন্যাক্স খাওয়ার ইচ্ছা হবে না। ভাজাভুজি বা বেশি নুন দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, বেশি চিনি যুক্ত খাবার খেলে কিন্তু ওজন বাড়বে। দিনে দু’বার খাচ্ছেন বলে দোকান থেকে কেনা প্যাকেটজাত ফলের রস, বেশি চিনি দেওয়া সিরিয়াল বা এনার্জি ড্রিঙ্ক খাবেন না। এতে ক্ষতিই হবে। তার চেয়ে খিদে পেলে নানা রকম বাদাম ও ডিটক্স পানীয় রাখতে হবে হাতের কাছে। এতে বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমবে। ওজন কমাতে বাদ দিতে হবে মধু। সকালে খালি পেটে গরম জলে একটা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে হজমক্ষমতা বাড়বে। তবে অম্বলের ধাত থাকলে লেবু বাদ দিন। এক চা চামচ গোটা জিরে সারা রাত এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ফুটিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এক চামচ জোয়ান বা একটি দারচিনির টুকরো জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ফুটিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এই ধরনের পানীয় পেটের রোগ সারায়, খিদে কমায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।