স্পাইনা বিফিডা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে, কী এই রোগ? ফাইল চিত্র।
গর্ভাবস্থাতেই রোগের বীজ বপন হতে থাকে ধীরে ধীরে। প্রসবের পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় নবজাতকের। স্পাইনা বিফিডা বিরলের মধ্যে বিরলতম রোগ, যা ভারতে প্রতি দশ হাজার শিশুর মধ্যে চার থেকে পাঁচ জনেরই হয়। মেরুদণ্ডের গঠনগত ত্রুটি দিয়ে সূত্রপাত হয়, ধীরে ধীরে শরীর পঙ্গু হতে থাকে। স্পাইনা বিফিডা কেন হয়, তা নিশ্চিত ভাবে জানা নেই এখনও, তবে বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে রোগটি জিনগত। কিছু ক্ষেত্রে মায়ের খাদ্যাভ্যাস ও পরিবেশগত কিছু কারণও এর জন্য দায়ী।
স্পাইনা বিফিডা কেন এত উদ্বেগের?
মেরুদণ্ডের গঠন অসম্পূর্ণ থাকে এই রোগে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। এই বিষয়ে ২০২৩ সালে ও চলতি বছরে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ থেকে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষকেরা জানিয়েছেন, স্পাইনা বিফিডা কেন হয়, তার কিছু সম্ভাব্য কারণ জানা গিয়েছে। গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে মায়ের শরীরে কিছু কোষ সমষ্টিগত ভাবে ‘নিউরাল টিউব’ তৈরি করে। এই ‘নিউরাল টিউব’ থেকেই পরবর্তী কালে শিশুর মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয়। যদি কোনও কারণে এই টিউবের গঠন অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তা হলে শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের গঠনও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘নিউরাল টিউব ডিফেক্ট’।
স্পাইনা বিফিডা নিয়ে জন্মানো শিশু ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারে না, উঠতে-বসতেও সমস্যা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই শিশুই পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতে পারে। মস্তিষ্কে জল জমে সেটির বিকাশ ব্যাহত হয়, মল-মূত্র ত্যাগে নিয়ন্ত্রণ থাকে না, শরীরের নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে যায়। মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটি থাকায় বুদ্ধির বিকাশ ঠিকমতো হয় না। হাত ও পায়ের গঠনেও অসামঞ্জস্য থাকে। হাড় ভঙ্গুর হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’ বাইরে বেরিয়ে আসছে, তখন স্নায়বিক রোগও দেখা দিতে থাকে।
চিকিৎসা কী?
এই রোগে জিন থেরাপিই একমাত্র উপায়। এখনও অবধি স্পাইনা বিফিডার তেমন কোনও চিকিৎসাপদ্ধতি নেই। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকেরা এই রোগটি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়ের শরীরে যদি ফলিক অ্যাসিড ও আয়রনের অভাব হতে থাকে, তা হলে শিশুর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শরীরে ফলিক অ্যাসিড ও আয়রনের ঘাটতি যাতে না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমন খাবার খেতে হবে যাতে ফোলেট রয়েছে, যেমন সবুজ শাকসব্জি, ফলের মধ্যে আঙুর, লেবু জাতীয় ফল, কলা, পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট থাকে। নানা রকম ডাল, ডিম, বাদাম, বীজেও ফোলেট থাকে।