সুগার হলে ফাইবার সমৃদ্ধ কোন পাঁচ খাবার তালিকায় রাখবেন, কী ভাবে খাবেন? ছবি: এআই।
রক্তে শর্করা বাড়ছে। তাই খাবার থেকে চিনি বাদ। হিসাব খুব সহজ। কিন্তু যতটা সহজ ভাবা হয়, ডায়াবেটিকদের ডায়েট কি ততটাই সরল?
ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝির কথায়, সকলে খাবারের শর্করা নিয়ে ভাবেন, মনে করেন চিনি বাদ দিলেই হবে, কিন্তু তা নয়। ফাইবারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবিটিসের রোগীদের বার বার বলা হয়, খাবারে যেন যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে। আসলে, ফাইবার কিছুটা ছাঁকনির মতো কাজ করে। খাবারের শর্করাকে রক্তে পৌঁছোনোর সময় আটকে দেয়। ফলে শর্করাযুক্ত খাবার যদি ফাইবার জাতীয় খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়, রক্তে চট করে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না।
ইদানীং যেমন সুস্থ থাকতে শর্করা বর্জন নিয়ে চর্চা হয়, তেমনই তালিকায় রয়েছে ফাইবারও। হজম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে ফাইবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পেট পরিষ্কারে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতেও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলেন চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা। ফাইবার ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবিটিসের মতো অসুখকে বশে রাখে।
ফাইবার সমৃদ্ধ কোন খাবার পাতে রাখবেন ডায়াবেটিকেরা? কী ভাবে খাবেন?
ডাল: বিভিন্ন রকম ডাল শুধু প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে না, এতে থাকে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবারও। মুসুর ডাল অত্যন্ত ভাল। এ ছাড়াও অন্য কোনও সমস্যা না থাকলে ডায়াবেটিকেরা যে কোনও রকম ডালই খেতে পারেন। এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজও পায় শরীর। পুষ্টিগুণ পেতে সেদ্ধ করে, স্যুপ করে ডাল খেতে পারেন ডায়াবেটিকেরা।
বার্লি: বার্লি একসময় জ্বরজারির পথ্য হিসাবে খাওয়া হত। এখন তেমন ভাবে আর কেউ খান না। কিন্তু বার্লির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশ কম। বি গ্লুকানের মতো ডায়েটরি ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বার্লি তাই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন ডায়াবেটিকেরা। স্যুপ, খিচুড়ি করে এটি খাওয়া যায়।
ব্রকোলি: ব্রকোলিও ডায়াবেটিকদের ফাইবারের চাহিদা পূরণ করতে পারে। ব্রকোলিতে রয়েছে সালফোরাফেন নামে এক উপাদান, যা শর্করা উৎপাদনকারী উৎসেচককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও তা সহায়ক। এই স্ট্রেসের কারণেই অনেক সময় শরীরে ইনসুলিন হরমোন ঠিক মতো কাজ করতে পারে না বলে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। খাবারের পুষ্টিগুণ পেতে স্যুপ করে, অল্প তেলে হালকা সাঁতলে সব্জিটি খাওয়া দরকার।
চিয়া বীজ: চিয়া বীজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ। ‘পিএমসি’ নামক জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে ৩০-৪০ ডায়েটরি ফাইবার থাকে, সলিউবল ফাইবার মেলে ৫-১০ গ্রাম, যা কার্বোহাইড্রেটের বিপাকক্রিয়া কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তে শর্করা নির্গত হয় ধীরে ধীরে। এক ঝটকায় শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে না। শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর কোলেস্টরল কমাতেও এটি সাহায্য করে। জলে ভিজিয়ে, স্মুদিতে মিশিয়ে কিংবা দইয়ে ভিজিয়ে রেখে চিয়া বীজ খাওয়া যেতে পারে।
ফল: আপেল, পেয়ারার মতো ফল ডায়াবেটিকদের জন্য ভাল। আপেলে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার রয়েছে। এই ফলগুলির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তা ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজও মেলে এতে। জলখাবার এবং দুপুরের খাওয়ার মাঝে অথবা দুপুরের খাবার খাওয়ার ঘণ্টাখানেক বা দুয়েক পরে ফল খাওয়া ভাল। এতে একসঙ্গে অনেকটা ক্যালোরি শরীরে যাবে না।