অন্যের আলিঙ্গনের অপেক্ষা না করে নিজেই নিজেকে জড়িয়ে ধরতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।
কাউকে কেবল জড়িয়ে ধরেই যে কত উপকার পাওয়া যায়, জেনে অবাক হতে হয়। কাছের মানুষের স্পর্শে মন ও শরীর ভাল থাকে। তা সে প্রেমের মানুষ হোন বা বাবা-মা অথবা সন্তান, কিংবা ভাইবোন বা বন্ধুবান্ধব। কিন্তু যদি জড়িয়ে ধরার মানুষই কাছে না থাকেন, সে ক্ষেত্রে কি আলিঙ্গন থেকে বঞ্চিত থাকবেন? জড়িয়ে ধরার যে উপকারিতা, তা পাবেন না নাকি! অন্যের আলিঙ্গনের অপেক্ষা না করে নিজেই নিজেকে জড়িয়ে ধরতে পারেন।
নিজেই নিজেকে আলিঙ্গন? এমনও হয় নাকি?
একাধিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, অন্যকে আলিঙ্গন করা আর নিজেকে আলিঙ্গন করার মধ্যে খুব একটা তফাত নেই। ‘জার্নাল অফ নার্সিং প্র্যাক্টিস’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিজেকে জড়িয়ে ধরলে কী ভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সমস্যা কমে গিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার এক গবেষক ইউলিয়া সুসান্তির নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল ২২ জন অংশগ্রহণকারীকে নিজেকে আলিঙ্গন করতে বলেন। কিন্তু তার আগে ও পরে একটি করে ফর্ম ফিলআপ করতে হয় তাঁদের। যেখান থেকে জানা যায়, নিজেকে জড়িয়ে ধরার আগে যতটা উদ্বেগে ভুগছিলেন তাঁরা, নিজেকে আলিঙ্গন করার পর সেটির তীব্রতা কমে যায়। তার মানে পাশে অন্য কেউ না থাকলে, নিজেকে জড়িয়ে ধরলেও অনেক উপকারিতা মেলে।
নিজেকে জড়িয়ে ধরলে হ্যাপি হরমোন বা অক্সিটোসিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত।
নিজেকে আলিঙ্গন করার উপকারিতা কী?
অন্যকে আলিঙ্গন করে যে উপকারিতা পাওয়া যায়, নিজেকে আলিঙ্গন করলেও সেই উপকারিতা মিলতে পারে।
ব্যথা উপশম: শরীরের ব্যথা কমে যেতে পারে নিজেকে জড়িয়ে ধরলে। এক গবেষণায় জানা যায়, দুই হাত দিয়ে বেষ্টন করে নিজেকে জড়িয়ে ধরলে ব্যথা-বেদনা কমে যেতে পারে। এই উপায়ের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বিভ্রান্তি তৈরি করে। শরীরে একটি জায়গায় ব্যথা হচ্ছে, অথচ হাত দু’টি দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন বলে মস্তিষ্কে মিশ্রণ সঙ্কেত পৌঁছোচ্ছে। মস্তিষ্ক যখন ব্যথার এলাকাটি নির্ধারণ করার চেষ্টা করে, তখন ব্যথার তীব্রতা কমে যায়।
উদ্বেগ কমে যাওয়া: নিজেকে জড়িয়ে ধরলে হ্যাপি হরমোন বা অক্সিটোসিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে মনের উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার তীব্রতা কমে যেতে পারে। ঠিক যে ভাবে উপরোক্ত গবেষণার কথা বলা হল, সে ভাবেই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নিজেকে আলিঙ্গন বেশ উপকারী।
নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি: যদি একাকিত্বে ভোগেন, তবে নিজেকে জড়িয়ে ধরার থেকে ভাল কিছু হতে পারে না। যে মুহূর্তে অন্য কারও প্রয়োজন পড়বে, অথচ কাউকে পাশে পাবেন না, তখন নিজেই নিজের পাশে দাঁড়াতে পারেন। নিরাপত্তাহীনতা আঁকড়ে ধরলে নিজেকে আলিঙ্গন করে উপকার মিলতে পারে। অন্য কাউকে জড়িয়ে ধরার মতোই অনুভূতি তৈরি হতে পারে।
মনমেজাজ ভাল করা: মনখারাপ থাকলে নিজেকে আলিঙ্গন করে দেখতে পারেন। অন্য কারও স্পর্শ সাহায্য করতে পারে অবশ্যই। তবে পাশে কেউ না থাকল নিজের স্পর্শেও উপকার মিলতে পারে। স্ট্রেস হরমোন অর্থাৎ, কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে হ্যাপি হরমোন বা অক্সিটোসিনের নিঃসরণ ঘটায়। অক্সিটোসিনকে অনেক ক্ষেত্রে ‘লাভ হরমোন’ বলা হয়। ফলে মেজাজের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে আলিঙ্গন।
নিজের প্রতি মনোভাব বদলানো: নিজের প্রতি অতিরিক্ত কঠোর আপনি? নিজেকে ভরসা করেন না, বা নিজেকে ভালবাসতে পারেন না? নিজের দু’টি হাত উল্টো পাশে নিয়ে গিয়ে চেপে ধরুন। নিজেকে জড়িয়ে ধরার ফলে উষ্ণতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। নিজের প্রতি ভালবাসা বাড়তে পারে। বেড়ে যেতে পারে আত্মবিশ্বাস।