ভারতীয় হেঁশেলে সব খাবারেই ঘি মেশানো হয়, এমন অভ্যাস কি স্বাস্থ্যকর, তারকাদের পুষ্টিবিদের মত কী? ছবি: সংগৃহীত।
গরম ভাত হোক বা রুটি— একটু ঘি মিশিয়ে নিলেই খাবারের স্বাদ-গন্ধ বদলে যায়। ডাল থেকে হালুয়া— ভারতীয় হেঁশেলেই সবেতেই ঘি দেওয়ার চল। স্বাস্থ্য ভাল রাখতে তারকারাও ডায়েটে ঘি রাখেন। সমাজমাধ্যমে নীতু কপূর জানিয়েছিলেন, প্রতি দিন দুপুরে খাওয়ার পরে এক চামচ ঘিয়ের সঙ্গে সামান্য গুড় মিশিয়ে খান। কেউ পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ঘি খান। কেউ আবার ওজন বাড়াতেও ঘি রাখেন পাতে। ভারতীয় হেঁশেলের অন্যতম অঙ্গ ঘি খাওয়া কতটা ভাল? আদৌ তা রোজ খাওয়া চলে কি?
ভাত, ডাল, সব্জি সবেতেই ঘি-এর ব্যবহার স্বাস্থ্যকর কি? ছবি:সংগৃহীত।
প্রতিটি খাবারে ঘি মেশানোর প্রবণতা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়, বলছেন বি-টাউনের তারকাদের পুষ্টিবিদ সিদ্ধান্ত ভার্গব। আলিয়া ভট্ট, অনন্যা পাণ্ডে-সহ বলিউড অভিনেত্রীদের অনেকেই সিদ্ধান্তের কথা মেনে চলেন। তিনি বলছেন, স্বাস্থ্যকর ভেবে মেশানো ঘি কিন্তু শরীরের পক্ষে অতিরিক্ত হয়ে যেতে পারে। প্রতিটি খাবারে ঘি মেশানো মানেই বাড়তি ক্যালোরি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে যাওয়া। যা অনাবশ্যক এবং ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতিকরও হতে পারে।
কী থাকে ঘিয়ে?
এতে থাকে শর্ট চেন ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ক্যালোরি। ১ চামচ ঘি খাওয়া মানে ১২০ ক্যালোরি শরীরে যাওয়া। প্রতি দিন সব খাবারে ঘি মেশানো হলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভবনা তো বটেই, কোলেস্টেরলও বেড়ে যায়। ডায়েটের ভুলে ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্সও বাড়তে পারে ।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ঘি খাওয়ার প্রয়োজন পরিমিত। ঘি হজমে সহায়ক, দ্রুত শরীরে শক্তিও জোগায়। তবে এই সমীক্ষালব্ধ রিপোর্টেই প্রকাশ, বেশি খেলে ঘি ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।
ঘি কি খাওয়া যাবে না?
ঘি খাওয়া ক্ষতিকর নয়। পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, তিনি ঘি খেতে বারণ করছেন না, তবে মাত্রা সম্পর্কে সচেতন করছেন। পরিমিত পরিমাণে খেলে ঘি উপকারী। সিদ্ধান্তের কথায়, সমাজমাধ্যমে ঘিয়ের স্বাস্থ্যকর উপযোগিতা নিয়ে যে ভাবে চর্চা চলছে, তা সঠিক নয়। ঘি মাত্রাতিরিক্ত কখনই খাওয়া ঠিক নয়।
বেশি ঘি খেলে কী হতে পারে?
· ঘি বেশি খাওয়া মানে বেশি ক্যালোরি শরীরে যাওয়া। ফ্যাট বৃদ্ধি পাওয়া। ফলে ওজন বাড়তে পারে।
· শুধু ওজন বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না সমস্যা। পেটের স্বাস্থ্যও এতে বিগড়ে যেতে পারে। পেট ভাল না থাকলে ত্বকেও প্রভাব পড়বে।
· হজমেও গোলমাল হতে পারে বেশি ঘি খেলে। শরীরের জন্য দরকার স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। সে ক্ষেত্রে ঘি বেশি না খেয়ে নানা রকম বাদাম খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে।
· পুষ্টিবিদের পরামর্শ, শুধু ঘি জীবনে বড় কোনও বদল আনতে পারে না। তাই তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভাল।
একই কথা জানাচ্ছেন কলকাতার পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক। অতীতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কারও লিভারের সমস্যা, কারও গলব্লাডার বাদ দেওয়া হলে, লিপিড-প্রোফাইল বেশি থাকলে ঘি খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলে নিয়মিত ঘি খেতে হলে পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভাল।’’