ডায়েটের কড়াকড়ি ছাড়াই রক্তে শর্করা বশে থাকবে কী ভাবে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ডায়াবিটিস এমন এক অসুখ, যা নিয়ে বিশ্ব জুড়েই চিকিৎসকেরা চিন্তিত। জিনগত কারণে এই রোগ হতেই পারে, তবে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা ডায়াবিটিস বাড়ার নেপথ্য কারণ হিসাবে চিকিৎসকেরা চিহ্নিত করছেন। এ অসুখ হলে কারও ইনসুলিন হরমোন ঠিক ভাবে কাজ করে না। কারও শরীরে আবার হরমোনটি তৈরি হয় না। তার ফলে খাবারের শর্করা শক্তিতে রূপান্তরিত না হয়ে রক্তে মিশতে থাকে।
রক্তে শর্করার ওঠা-পড়া যে শুধু ডায়াবিটিস হলেই হয়, তা কিন্তু নয়। অনেকের ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্সও থাকে। এমন সমস্যায় ইনসুলিন হরমোনটি শরীরে ঠিক মতো কাজ করে না বলে রক্তে যখন-তখন শর্করা বেড়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স হওয়া মানেই কারও সুগার হওয়া নয়। তবে ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স বেড়ে গেলে রক্তে শর্করা বাড়বে।
ডায়াবিটিস হোক বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, কিংবা অন্য কোনও কারণ— রক্তে শর্করার ওঠা-পড়া নানা রকম শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, ক্লান্তি আসতে পারে, মেজাজে প্রভাব পড়তে পারে, দেখা দিতে পারে আরও নানা সমস্যা। ডায়াবিটিস হলে বা ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্সের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকেই ডায়েট মেনে চলার পরামর্শ দেন। তবে সে ডায়েট মানেন ক’জন?
নেটপ্রভাবী আমেরিকান চিকিৎসক ভ্যাসিলি এলিওপোলুস কড়া ডায়েট নয়, সমাজমাধ্যমে পরামর্শ দিচ্ছেন দৈনন্দিন জীবনযাপনে সহজ কয়েকটি অভ্যাস তৈরি করার। তাঁর দাবি, এতেই কাজ হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠা-পড়া না করে সুস্থিত থাকবে।
প্রোটিন: দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় প্রোটিন থাকা জরুরি। দৈনিক ২৫—৩০ গ্রাম প্রোটিন খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, চিজ়, সয়াবিন, ডাল, বাদাম, বিন জাতীয় শস্যে যথেষ্ট মাত্রায় প্রোটিন মেলে। তার মধ্যে কোনও খাবারে ফ্যাটের মাত্রা বেশি, ক্যালোরি বেশি। ডায়াবিটিক বা রক্তে শর্করার মাত্রা বশে রাখতে হলে ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে, এমন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেছে নেওয়া ভাল। বিভিন্ন রকম ডাল, কড়াইশুঁটি, টোফু, বাদাম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ তালিকায় রাখা দরকার।
খাবার পরিকল্পনা: পছন্দের খাবার বাদ দিতে বলছেন না ভ্যাসিল, শুধু পরিকল্পনা মাফিক খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রাতরাশ হোক বা মধ্যাহ্নেভোজ, শুরুতেই ফাইবার এবং প্রোটিন রাখা দরকার। তার পরে কার্বোহাইড্রেট। যেমন খাওয়ার ঠিক আগেই স্যালাড খাওয়া যেতে পারে। সব্জিতে ফাইবার থাকে, যা ভাত-রুটির কার্বোহাইড্রেট থেকে শর্করা নিঃসরণের গতি কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তে দ্রুত শর্করা মিশতে পারে না বা তার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় না।
খাওয়ার পরে হাঁটা: ভ্যাসিল শুধু নন, যে কোনও চিকিৎসকই বলেন, খাওয়ার মিনিট ৫-১০ পরে মিনিট ১০-১৫ হাঁটতে। জোরে নয়, সাধারণ পায়চারি যথেষ্ট। এতে গ্লুকোজ় শরীরে জমতে পারে না, ইনসুলিনের সাহায্য ছাড়াই তা শক্তিতে পরিণত হয়। হজম ভাল ভাল হয়। আচমকা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে। মূলত টাইপ ২ ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য এই পন্থা অত্যন্ত কার্যকর।
ঘুম: রাতের ঘুম ভাল হওয়া দরকার। ভ্যাসিল বলছেন, টানা ঘুম ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। ঘুমের সময় নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কথা বলছেন তিনি। অনেকেই মুখে খুলে ঘুমোন, হাঁ করে শ্বাস নেন। এতে সমস্যা হতে পারে। নাক দিয়ে শ্বাস নিলে শরীরে ঠিক ভাবে অক্সিজেন যায়।
কর্টিসল: মনখারাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদির নেপথ্যে থাকে কর্টিসল হরমোন। এগুলি ইনসুলিন সেন্সিটিভিটির উপর প্রভাব ফেলে। ডায়াবিটিস বশে রাখতে হলে, রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে মানসিক চাপ কমানো জরুরি। সকালে উঠে খোলা হাওয়ায় হাঁটা, রোদের তাপ গায়ে লাগানো, প্রাণায়াম, ব্যায়াম— এগুলি মন তরতাজা রাখে। কর্টিসলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।