উত্তরপ্রদেশ ও অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের পাশাপাশি এ বারে নিজের রাজ্যেও পরপর শিশুমৃত্যুর জেরে রীতিমতো অস্বস্তিতে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ডিসেম্বরে ভোট গুজরাতে। এমনিতেই নোট বাতিল এবং জিএসটির কারণে রাজ্যের ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশে অসন্তোষ রয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তার মধ্যেই অমদাবাদের সিভিল হাসপাতালে তিন দিনে ১৮টি শিশু মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য নিয়েও বিজেপিকে চাপে ফেলতে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস।
‘গুজরাত মডেল’-কে সামনে রেখেই ২০১৪-য় দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছেন মোদী। তখনই কংগ্রেসের দাবি ছিল, শিল্প বা সড়কের মতো ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক পরিকাঠামোর প্রশ্নে গুজরাত গোটা দেশের গড় সূচকের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। কংগ্রেসের এখন দাবি, অমদাবাদে এতগুলি শিশুর মৃত্যু রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেহাল দশাটিই বেআব্রু করে দিয়েছে।
ফি দিন গড়ে ৪-৫টি শিশুর মৃত্যু হলেও, গত শনিবার এক ধাক্কায় ৯টি সদ্যোজতের মৃত্যু হয় অমদাবাদের সিভিল হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত করে জানিয়েছে, ৯টির মধ্যে দূরের হাসপাতাল থেকে রেফার করা ৫টি শিশুই কম ওজন হওয়ার কারণে মারা গিয়েছে। এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় কংগ্রেস। তারা হাইকোর্টে কর্মরত কোন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি তুলেছে। প্রসূতিদের ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবকে হাতিয়ার করে দীর্ঘমেয়াদি প্রচারে নামবে তারা।
কংগ্রেসের মতে, গ্রামাঞ্চলে কম ওজনের শিশু জন্মানোটা এ রাজ্যের দীর্ঘদিনের সমস্যা। এর মূল কারণ, গর্ভবতীদের অপুষ্টি। কংগ্রেস নেতা শক্তিসিন গোহিলের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল বলেই মায়েরা উপযুক্ত খাদ্য পাচ্ছেন না। গ্রামীণ এলাকায় গর্ভবতীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখার জন্য অঙ্গনওয়াড়ি বা আশা কর্মীরা রয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কম বেতনে কাজ করানোয় তাঁদের অধিকাংশই বসে গিয়েছেন। পুষ্টিকর খাবার, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছেন না মায়েরা। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে সরকার যে উদাসীন, এ থেকেই তা স্পষ্ট।’’
কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, গ্রামীণ এলাকায় ভাল হাসপাতাল না থাকার কারণেও সব চাপ এসে পড়ছে শহরের হাসপাতালগুলিতে। গুজরাতে প্রচারের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেস নেতা অশোক গহলৌতের অভিযোগ, গ্রামে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাবও শিশুমৃত্যু বাড়ার কারণ। মৃত্যুর এই ঘটনাগুলিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, কী ভাবে রাজ্যের বিজেপি সরকার স্বাস্থ্যের বিষয়টি এত দিন উপেক্ষা করে এসেছে।