ব্যপম কেলেঙ্কারিতে এ বার এক ছাত্রীর অপমৃত্যুর তদন্তের বন্ধ হওয়া ফাইল খুলছে পুলিশ। ওই অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে সাড়ে তিন বছর আগে, ২০১২-র জানুয়ারিতে। আর ইনদওরের মেডিক্যাল কলেজের ওই ছাত্রীর নাম নম্রতা দামোর। তাঁর বাড়ি উজ্জয়িনীর ঝাবুয়ায়। ১৯ বছর বয়সে মৃত এই নম্রতাকে নিয়েই প্রতিবেদন তৈরির জন্য তাঁর বাবা মেহতাব সিংহ দামোরের সাক্ষাৎকার সম্প্রতি নিতে গিয়ে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন টিভি-সাংবাদিক অক্ষয় সিংহ। তাঁর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোতে শুরু করে। গত সপ্তাহে মারা যান তিনি।
প্রসঙ্গত, ব্যপম কেলেঙ্কারি নিয়ে কোণঠাসা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান মঙ্গলবারই এই ব্যাপারে সিবিআই তদন্ত চেয়ে সুপারিশ করেছেন। ব্যপম কাণ্ডে রহস্যমৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছুঁতে যাচ্ছে।
কিন্তু মেডিক্যালের ছাত্রী নম্রতার নাম ব্যপম কেলেঙ্কারিতে জড়াল কী ভাবে?
এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে যে তথ্য উঠে আসছে, তা হল: যে চক্র ব্যাপম কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, সেই চক্রের সহায়তাতেই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পেরেছিলেন নম্রতা দামোর। অসাধু উপায়ে নম্রতা-সহ বহু পড়ুয়া প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বলে অভিযোগ উঠেছে ব্যপম কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে আসার পরে।
২০১২-র ৭ জানুয়ারি নম্রতার ক্ষতবিক্ষত দেহ রহস্যজনক ভাবে রেল লাইনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ প্রথমে একটি খুনের মামলা রুজু করেও পরে এটিকে দুর্ঘটনা বলে জানিয়ে মামলাটি ‘ক্লোজ’ করে দেয়। সেই সময়ে পুলিশের একাংশ এটিকে আত্মহত্যা বলেও দাবি করেছিলেন।
বুধবার অবশ্য উজ্জয়িনীর পুলিশ সুপার মনোহর সিংহ বর্মা বলেন, ‘‘নম্রতা দামোরের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছিল, সেটা নতুন ভাবে খতিয়ে দেখতে আমরা নির্দেশ দিয়েছি। ওই ঘটনার তদন্ত নতুন ভাবে করবেন তারানার মহকুমা পুলিশ অফিসার এর কে শর্মা।’’
কোন পরিপ্রেক্ষিতে নম্রতার রহস্যমৃত্যুর নতুন তদন্ত হচ্ছে?
আসলে নম্রতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত সাংবাদিক অক্ষয় সিংহের মৃত্যুতেই ফের প্রচারের আলোয় উঠে আসে বিষয়টি।
নম্রতার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন যে চিকিৎসকেরা, তাঁরা সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন। ফলে, নম্রতার মৃত্যু রহস্য নতুন মোড় পায়। ময়নাতদন্ত করা তিন চিকিৎসকের মধ্যে বি বি পুরোহিত বলেছেন, ‘‘নম্রতাকে খুন করা হয়েছিল। এক শতাংশও স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনও সম্ভাবনা আমরা দেখিনি। তাঁর নাক ও মুখে যে আঘাতের চিহ্ন মিলেছিল, তা থেকে স্পষ্ট তাঁকে শ্বাসরোধ করা হয়েছিল।’’ চিকিৎসকদের বক্তব্য, নাকমুখ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছিল নম্রতাকে। ওই তিন চিকিৎসকেরই ময়নাতদন্তের কাজে ২৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে পুরোহিত দাবি করেছেন।
এ দিন অবশ্য মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট ব্যপম নিয়ে শুনানি করতে চায়নি। আজ, বৃহস্পতিবার মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে ওঠার কথা।