মাংস বন্ধ, মিলনও বন্ধ, কেন্দ্রের ‘উপদেশ’ গর্ভবতীদের

প্রসূতিদের অনেকটা এমন উপদেশই দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আয়ুষ মন্ত্রকের অধীন ‘কেন্দ্রীয় যোগ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা পর্ষদ’ (সিসিআরওয়াইএন)।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০৪:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

যৌনতা নয়, মাংস নয়, ডিম নয়। গর্ভাবস্থায় বরং মনে থাক আধ্যাত্মিক চিন্তা, সঙ্গে কিছু ভাল মানুষ, হাতে বিখ্যাত মানুষদের জীবনী আর দেওয়ালে সুন্দর ছবি। তবেই নাকি সুস্থ সন্তান আসবে কোল জুড়ে।

Advertisement

প্রসূতিদের অনেকটা এমন উপদেশই দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আয়ুষ মন্ত্রকের অধীন ‘কেন্দ্রীয় যোগ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা পর্ষদ’ (সিসিআরওয়াইএন)। আসন্ন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে ওই পর্ষদের সংকলিত মা ও শিশুর যত্ন সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন আয়ুষ মন্ত্রী শ্রীপদ নাইক। তাতেই রয়েছে এমন উপদেশাবলি!

দেশবাসী কী খাবেন-পরবেন, সে বিষয়ে মতামত চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আগেই উঠেছে। এ বার জুড়ল ভ্রান্ত, অবৈজ্ঞানিক উপদেশ দিয়ে গর্ভবতীদের ভুল পথে চালিত করার চেষ্টার বিষয়টিও।

Advertisement

মন্ত্রীর দাবি, গর্ভবতীরা কী কী যোগব্যায়াম করবেন, তা বলা আছে পুস্তিকায়। অথচ সেটির ১৪ নম্বর পাতাতেই লেখা রয়েছে, ‘বাসনা, রাগ, ঘনিষ্ঠতা, বিদ্বেষ এবং কাম— সবের থেকে দূরে থাকতে হবে গর্ভবতীদের।’ তারই আগে-পরে অন্যান্য উপদেশ।

সব চেয়ে আশ্চর্যের, চিকিৎসকেরা যেখানে গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি না হওয়ার দিকটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেন, সেখানে মাংস-ডিম তো বটেই, আমিষ খাওয়াই বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে! কলকাতার স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘গর্ভাবস্থায় মাংস জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। শুধু গুণগত মান যেন ভাল থাকে। মাংস ঠিক মতো রান্না হয়েছে কি না, যাচাই করা জরুরি।’’ আর এক স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাংস জাতীয় খাবার খেলে যদি সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়ায় সমস্যা হতো, তা হলে বিলেতে কোনও মা সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারতেন না।’’ তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত রেগে যাওয়া কারও পক্ষেই ভাল নয়। রাগ চেপে রাখা আরও খারাপ। গর্ভবতীরা রেগে গেলে তা প্রকাশ পাওয়া দরকার।

আরও পড়ুন:প্রমাণ করব আমি নির্দোষ, দাবি মাল্যের

আর যৌনতা? মল্লিনাথবাবুর কথায়, ‘‘গর্ভবতী অবস্থায় প্রথম ও শেষ তিন মাস যৌন সম্পর্কে না যাওয়ার পরামর্শ দেন বেশির ভাগ চিকিৎসক। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, গর্ভাবস্থায় শেষ এক মাসের যৌন সম্পর্ক স্বাভাবিক ভাবে সন্তান প্রসবে সাহায্য করে। আমরা এখনও অনেক ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে রয়েছি।’’

গত মাসেই কলকাতায় একটি আলোচনাসভা করেছিল আরএসএস-এর আরোগ্য ভারতী সংগঠন। বিষয়বস্তু ছিল ‘গর্ভসংস্কার’। সুস্থ এবং উন্নত মানের সন্তান চাইলে মিলনের সময়ে কী কী নিয়ম মানতে হবে, গর্ভসঞ্চারের পরে স্ত্রীকে কেমন জীবনযাপন করতে হবে, কী ধরনের মন্ত্র-গান ইত্যাদি শুনতে হবে, সন্তানলাভে ইচ্ছুক দম্পতিদের ওই আলোচনাসভায় শিখিয়েছিলেন এক আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। সেই সভা নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও হয়েছে।

কিন্তু তাতেই বা থামছে কে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement