(বাঁ দিকে) উদ্ধব ঠাকরে এবং রাজ ঠাকরে (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্র এবং মরাঠি ভাষার ‘স্বার্থরক্ষার’ জন্য এক দশক বাদে আবার এক মঞ্চে তাঁরা। হিন্দি ভাষার আগ্রাসন রুখে দেওয়ার বিজয়োৎসবে শনিবার মুম্বইয়ের ওরলি পার্কের অডিটোরিয়ামে পাশাপাশি দেখা যাবে শিবসেনা (ইউবিটি)-র প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং তাঁর তুতো ভাই তথা মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-র প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান রাজ ঠাকরেকে।
মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিন্ডেসেনা-এনসিপি (অজিত)-র জোট সরকার সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে স্কুলে ‘তিন ভাষা’ বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করেও প্রবল বিরোধিতার জেরে পিছু হটেছে। তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার। সেই ‘বিজয়’ উপলক্ষেই শনিবার ওরলিতে এই ‘আওয়াজ মারাঠিচা’ (মারাঠি কণ্ঠস্বর) সমাবেশের আয়োজন করেছে উদ্ধব এবং রাজের দল।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের দ্বিতীয় প্রয়াণদিবসে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল উদ্ধব এবং রাজকে। তবে নিছক মরাঠা ভাষারক্ষার আন্দোলন নয়, উদ্ধব-রাজ সমঝোতার উদ্যোগের নেপথ্যে ভোটের রাজনীতির অঙ্ক রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। চলতি বছরের শেষেই বৃহন্মুম্বই পুরসভা নির্বাচন রয়েছে। তাঁদের মতে, সেই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই একজোট হচ্ছেন দু’ভাই। ঘটনাচক্রে, যে ‘মরাঠা অস্মিতা’ রক্ষার ডাক দিয়ে প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরে ষাটের দশকে শিবসেনা গড়েছিলেন, তার পতাকা, প্রতীক এবং ‘রাজনৈতিক উত্তরাধিকার’ এখন একনাথ শিন্ডের হাতে। তাই বালাসাহেবের ভাঙা পরিবার ফের জোড়া লাগলেও আপাতত তাঁর দলের কর্তৃত্ব আপাতত শিন্ডের হাতেই থাকবে।
গত বছরের নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে ২৮৮ আসনের মধ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ-র সহযোগী হিসাবে ৮১টি আসনে লড়ে ৫৭টিতে জিতেছিল শিন্ডেসেনা। তাদের ঝুলিতে গিয়েছিল প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট। অন্য দিকে, ‘ইন্ডিয়া’র শরিক উদ্ধবসেনা প্রায় ১০ শতাংশ ভোট পেলেও ২০-র বেশি আসনে জিততে পারেনি। অন্য দিকে, রাজের এমএনএস ১৩৫টি আসনের প্রার্থী দিয়ে দেড় শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেলেও কোনও আসনে জিততে পারেনি। অর্থাৎ, দু’ভাই হাত মেলালে ভোটের পাটিগণিতের হিসেবে বড় কোনও প্রভাব পড়ার কথা নয়। কিন্তু মরাঠা ভাবাবেগে ‘অন্য রকম’ সমীকরণ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই।
প্রসঙ্গত, এক সময় বালাসাহেবের রাজনৈতিক উত্তরসূরি মনে করা হত তাঁর ভাইপো রাজকেই। কিন্তু দ্রুত অবিভক্ত শিবসেনায় উত্থান হতে থাকে তুলনায় মুখচোরা এবং শান্ত উদ্ধবের। দলে খানিক কোণঠাসা হয়ে যান রাজ। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালে বালাসাহেবের জীবদ্দশাতেই শিবসেনা ছাড়েন রাজ। পরের বছর তৈরি করেন নিজের নতুন দল এমএনএস। আর বাল ঠাকরের অবর্তমানে শিবসেনার প্রধান হন উদ্ধব। ২০২২ সালের জুন মাসে বিজেপির মদতে শিন্ডের বিদ্রোহের জেরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রিত্বের পাশাপাশি দলের নাম ও প্রতীকও হারান উদ্ধব। ‘কট্টরপন্থী’ অবস্থান এবং হিংসাত্মক আন্দোলনের কারণে ক্রমশ মরাঠা রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়া রাজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কি তিনি আবার ‘মরাঠা হৃদয়সম্রাট’ হয়ে উঠতে পারবেন?