সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানধারণের বয়ঃসীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সন্তানধারণের জন্য যে সকল দম্পতি সারোগেসির আশ্রয় নিয়ে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বয়ঃসীমা আগেই বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বয়স নির্ধারিত করে দেশে নতুন আইন চালু হয়েছে ২০২২ সাল থেকে। কিন্তু সকল দম্পতি সেই আইনের আওতায় পড়বেন না। কেউ কেউ ছাড় পাবেন বয়সের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি একটি মামলায় এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়েছে, যে সমস্ত দম্পতি সারোগেসির প্রক্রিয়া ২০২২ সালের আগেই শুরু করে দিয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বয়সের নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
২০২১ সালের গর্ভদান (সারোগেসি) আইন কার্যকর হয়েছে ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে। তাতে বলা হয়েছে, গর্ভদানে ইচ্ছুক দম্পতিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শংসাপত্র আনতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ২৩ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ২৬ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। তাঁরা যে বিবাহিত এবং এই বয়ঃসীমার মধ্যে পড়েন, তা শংসাপত্রে লেখা থাকতে হবে। তবেই মিলবে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানধারণের অনুমতি। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই আইন সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানধারণে ইচ্ছুক দম্পতিদের হতাশ করার জন্য নয়। বরং তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত করাই নতুন আইনের উদ্দেশ্য।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, মোট তিন ক্ষেত্রে দম্পতিরা সারোগেসির বয়ঃসীমায় ছাড় পাবেন। প্রথমত, ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারির আগে সারোগেসির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইচ্ছুক দম্পতি ওই সময়ে ভ্রূণ তৈরির মুখে ছিলেন বা গ্যামেট নিষ্কাশনের পর জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া চলছিল। তৃতীয়ত, সারোগেট মায়ের জরায়ুতে ভ্রূণ স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছিল। এই তিন ক্ষেত্রে বয়ঃসীমার নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে না।
সারোগেসি আইন নিয়ে সম্প্রতি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিন দম্পতি। তাঁদের বক্তব্য, তাঁদের সারোগেসি প্রক্রিয়া চলাকালীন এই আইন কার্যকর হয়েছে। আইনে যে বয়ঃসীমার কথা বলা হয়েছে, তাঁরা তার বাইরে। ফলে আইনত তাঁদের সারোগেসি অবৈধ হয়ে পড়ছে। আর এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এই জটিলতার সমাধান চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান দম্পতিরা। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সারোগেসি যে কোনও দম্পতির অধিকারের মধ্যে পড়ে। দেশের আইন কমিশনের ২২৮তম রিপোর্টে বলা হয়েছে, যদি প্রজননের অধিকার সাংবিধানিক সুরক্ষা পায়, তবে সারোগেসিকেও একই সুরক্ষা দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্তানহীন দম্পতি প্রজননের অধিকার পায়।
সুপ্রিম কোর্ট এ প্রসঙ্গে বলেছে, যে সমস্ত দম্পতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তানধারণে অক্ষম, তাঁরা সারোগেসি প্রক্রিয়ার সাহায্য নিতে পারেন। ২০২২ সালে আইন প্রণয়নের আগে পর্যন্ত এতে কোনও বিধিনিষেধ বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সারোগেসিকে বাণিজ্যিক শোষণের হাত থেকে বাঁচানোই এই আইনের লক্ষ্য। ইচ্ছুক দম্পতিদের হতাশ করা নয়।