অরুণ জেটলি।—ফাইল চিত্র।
গোরক্ষকদের তাণ্ডব ও দলিত-সংখ্যলঘুদের উপর হামলা নিয়ে সংসদে আলোচনায় রাজি হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু আলোচনার জবাব দিতে গিয়ে বিরোধীদের প্রায় সব তির্যক প্রশ্নই এড়িয়ে গেলেন অরুণ জেটলি। ঘটনার নিন্দা করেই দায় ঝেড়ে ফেলেন রাজ্যসভার শাসক দলের নেতা। জেটলির বক্তব্য শেষ হতেই ক্ষুব্ধ বিএসপি সাংসদরা রাজ্যসভা ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গোরক্ষকদের তাণ্ডব ও দলিত-সংখ্যালঘু নিগ্রহ বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা। চাপের মুখে এ নিয়ে সংসদে আলোচনার প্রস্তাবও মেনে নিয়েছে সরকার। গত কাল এই বিতর্কে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ। আজও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়ে কুমারী শৈলজার মন্তব্য, ‘‘দেশের নতুন নাম এখন লিঞ্চিংস্তান হয়েছে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, গোরক্ষকদের উৎপাত ও দলিত-সংখ্যালঘু নিগ্রহ মূলত বিজেপি-শাসিত রাজ্যেই বেশি হচ্ছে। শৈলজা বলেন, ‘‘শাসক দলের সমর্থন থাকায় আক্রমণকারীদের মনে কোনও ভয় নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।’’
কাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহির দাবি করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গেও গোরক্ষকেরা সক্রিয়। সেই দাবি মানেননি তৃণমূল সাংসদরা। আজ তাই কিছুটা ঘুরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলকে আক্রমণ শানায় বিজেপি। বিজেপির প্রভাত ঝা বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে রাজনৈতিক বিবাদে পশ্চিমবঙ্গে ৫০ জন মারা গিয়েছে। এটা কী পরিকল্পিত হত্যা নয়?’’ তাঁর মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল দায় এড়াতে পারে না।’’
কংগ্রেসকে পাল্টা জবাব দিতে ১৯৮৪-র শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে আনেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। বলেন, ‘‘শিখ দাঙ্গায় ৩০০০ জনের মৃত্যুর পিছনে যারা ছিল, তাদের অধিকাংশ শাস্তি পায়নি। তারা স্বাধীন ভাবে ঘুরছেন।’’ অস্বস্তিতে পড়ে কংগ্রেস প্রথমে হইচই ও পরে কক্ষত্যাগ করে। আবার বিজেপি-শাসিত ঝাড়খণ্ডে সংখ্যালঘু সমাজের লোকেদের কী ভাবে গো-হত্যার অভিযোগ তুলে হত্যা করা হচ্ছে, তা জানান জেডিইউ সাংসদ আলি আনওয়ার।
বিকেলে আলোচনার জবাব দিতে গিয়ে এ ধরনের সমস্ত ঘটনার নিন্দা করেন জেটলি। বলেন, ‘‘হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। যারা আইন নিজের হাতে নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, এই ঘটনাগুলিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিচলিত। তাঁর নির্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ওই রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। কী ভাবে এই উৎপাত রোখা যায়, তার জন্য লিখিত পরামর্শও পাঠানো হয়েছে রাজ্যগুলিকে। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন জেটলি।