Transgender

দেহব্যবসা করে পড়াশোনা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব জিতেছেন

আন্তর্জাতিক খেতাব পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে এখনও বেশ অসহায় নাজ। স্থায়ী উপার্জনের রাস্তা নেই।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ১৪:৩৭
Share:
০১ ১৮

দেশের প্রথম রূপান্তরকামী সুন্দরী তিনি। দেশে তো বটেই বিদেশেও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক খেতাব জিতেছেন। একবার নয় সাত বার। তবু উপার্জনের জন্য এখনও নিয়মিত রাস্তায় দাঁড়াতে হয় তাঁকে।

০২ ১৮

নাজ জোশী একজন রূপান্তরকামী। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)-র ছাত্রী। পোশাক ডিজাইনিংয়ে স্নাতক। নিজের ব্যাচে শীর্ষ স্থানাধিকারী ছিলেন নাজ। তবে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে বারে নাচতে হয়েছে। এমনকি যৌনকর্মীর কাজও করেছেন নাজ।

Advertisement
০৩ ১৮

ছোটবেলাতেই বাবা-মা তাঁকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মেয়েলি হাবভাবে লজ্জায় পড়তেন তাঁরা। প্রতিবেশীদের ভয়ে মুম্বইয়ের এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। সেখানেই মানুষ হন নাজ।

০৪ ১৮

তবে নিজের খরচ বরাবর নিজেই বহন করেছেন। পড়াশোনার ইচ্ছে ছিল প্রবল। ১২ বছর বয়স থেকে বারে নাচছেন। তাতে অবশ্য নাজের কোনও অসুবিধা হয়নি। বরং মেয়েদের মতো পোশাক পড়তে পেরে, মেক আপ করার সুযোগ পেয়ে ভালই লাগত তাঁর।

০৫ ১৮

এ ভাবেই উপার্জন করে আইএমটি থেকে এমবিএ-ও করেছেন নাজ। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন সংত্রান্ত অস্ত্রোপচারের খরচও জোগাড় করেছিলেন নিজেই।

০৬ ১৮

মডেলিং করবেন কখনও ভাবেননি। বরং ডিজাইনার হওয়ারই ইচ্ছে ছিল। পেশায় মডেল এক তুতো বোনের মাধ্যমে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় আসা তাঁর। পরে সেই বোনেরই অকাল মৃত্যুতে মডেলিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা মাথায় আসে নাজের।

০৭ ১৮

২০১২ সাল থেকে মডেলিং এজেন্সির কাজ করতে শুরু করেন। ২০১৪-এ প্রথম সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নাজ। তাঁর সাম্প্রতিক সাফল্য এমপ্রেস আর্থের খেতাব জয়।

০৮ ১৮

মে মাসে ভারতের হয়ে এই আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন নাজ। গত ১ জুন সেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। ওই প্রতিযোগিতায় নাজ একাই ছিলেন রূপান্তরকামী।

০৯ ১৮

আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নারীদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সেরা সুন্দরীর খেতাব ছিনিয়ে নেওয়া রূপান্তরকামী তিনিই প্রথম। তবে নাজকে তার জন্য অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি কমবয়সিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় বয়স নিয়েও কুমন্তব্য শুনতে হয়েছে তাঁকে।

১০ ১৮

মোট ১৫টি দেশের প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন। নাজ জানিয়েছেন, একজন রূপান্তরকামীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে জেনে অনেকে প্রতিযোগিতা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে এই সব অপমান গায়ে মাখেননি নাজ। তিনি তাঁর সেরাটা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এবং সেরার খেতাবটি ছিনিয়ে নিয়েছেন।

১১ ১৮

নাজের সঙ্গে শেষ পাঁচে ছিলেন কলম্বিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল এবং স্পেনের সুন্দরীরা। প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হন কলম্বিয়ার প্রতিযোগী ভ্যালেন্টিনা। তৃতীয় স্থানে ছিলেন মেক্সিকোর অলিভিয়া। দু’জনেই নাজের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছেন।

১২ ১৮

এমপ্রেস আর্থের এই প্রতিযোগিতা দুবাইয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের আবহে আয়োজকরা স্থান বদলান। ঠিক হয় কোনও নির্দিষ্ট দেশের বদলে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মেই বসবে এমপ্রেস আর্থের আসর। সেই মতো ডিজিটাল প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের নানারকম কাজ দেওয়া হয়েছিল। সেই সব কাজ সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি ইভনিং গাউন এবং নিজের দেশের জাতীয় পোশাক ও সংস্কৃতির প্রদর্শন করতে বলা হয় প্রতিযোগীদের। সামাজিক দায়িত্ব পালনের কাজে গ্রামের মহিলাদের আত্মরক্ষার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন নাজ। তাঁর সেই আলোচনা বিচারকদের প্রশংসা পায়।

১৩ ১৮

শেষ রাউন্ডে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। শেষ পাঁচ প্রতিযোগীকে একই প্রশ্ন করেছিলেন বিচারকেরা। জানতে চাওয়া হয়, ‘‘লকডাউনই কি অতিমারির একমাত্র সমাধান?’’ জবাবে নাজ বলেন, ‘‘লকডাউন হয়তো রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমাতে পারে। তবে অতিমারিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতাই। আর আমরা যাঁরা বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম থেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সুবিধা পাই, তাঁরা এই মঞ্চকে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে লাগাতে পারি। তাঁদের ধৈর্য্য ধরতে বলতে পারি। ইতিবাচক হওয়ার প্রেরণা দিতে পারি।’’ অতিমারি এবং লকডাউন নিয়ে নাজের ভাবনা ভাল লাগে বিচারকদের।

১৪ ১৮

নাজ অবশ্য এর আগেও আরও বহু আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন। ২০২০ সালে মিস ইউনিভার্স ডাইভারসিটির খেতাব পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পর পর তিন বার মিস ওয়ার্ল্ড ডাইভারসিটির মুকুট উঠেছে তাঁর মাথায়। এ ছাড়া মিস রিপাবলিক ইন্টারন্যাশনাল সৌন্দর্য রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফেও সৌন্দর্য দূত হিসাবে নির্বাচিত করা হয় তাঁকে।

১৫ ১৮

তবে আন্তর্জাতিক খেতাব পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে এখনও বেশ অসহায় নাজ। স্থায়ী উপার্জনের রাস্তা নেই। ফ্যাশন ডিজাইনের টপার, আইএমটি থেকে এমবিএ করা নাজ বহু চেষ্টা করেও একটি চাকরি পাননি। নাজ জানিয়েছেন, এর কারণ তিনি একজন রূপান্তরকামী আর সমাজ এখনও একজন রূপান্তরকামীকে আলাদা চোখেই দেখে।

১৬ ১৮

বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। তবে সে সব অনিয়মিত। এখনও অন্য বহু রূপান্তরকামীদের মতো নিয়মিত সকালে রাস্তায় নেমে হাত পাততে হয় তাঁকে। তবে নাজ জানিয়েছেন সমাজের এই মনোভাবের বিরুদ্ধে তাঁর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা জারি থাকবে। তাঁর মতো আর যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার, তাদের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই এই চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তিনি। বরাবরই নিজর খরচ নিজে চালানোর পক্ষপাতি নাজ তাই কোনও কাজকেই ছোট মনে করেন না

১৭ ১৮

মুসলিম মা এবং হিন্দু পাঞ্জাবী বাবার সন্তান নাজ। তবে বাবা এখনও কথা বলেন না তাঁর সঙ্গে। মা-ও সুযোগ পেলেই গঞ্জনা দেন। নাজ জানিয়েছেন, রূপান্তরকামী হিসেবে অনেকরকম মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাঁদের। এর সঙ্গে পরিবারকে পাশে না পাওয়া আরও বেদনাদায়ক।

১৮ ১৮

নাজ এখন একা মা। দু’টি মেয়ে আছে তাঁর। একটি আইভিএফ শিশু। অন্য জনকে তার মা ময়লা ফেলার পাত্রে ফেলে দিয়েছিল। সেখান থেকে তাকে তুলে এনে দত্তক নিয়েছেন নাজ। তাদের নিজের মতো করে মানুষ করছেন। নাজ জানিয়েছেন, ভালবাসা তাঁর দুই সন্তানের কাছেই পেয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement