গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিহারের বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়েছে সোমবার। তার অব্যবহিত পরেই শাসক এনডিএ এবং বিরোধী ‘মহাগঠবন্ধন’-এর মধ্যে আসন নিয়ে দরকষাকষি, চাপ তৈরি শুরু হয়ে গেল। বিজেপি-কে ‘বার্তা’ দিয়ে প্রশান্ত কিশোরের দলের সঙ্গে সমঝোতা করার জল্পনা ভাসিয়ে দিল চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি। অন্য দিকে, বিরোধী জোটের বড় দল আরজেডি-র উপর আসন নিয়ে চাপ বাড়াতে শুরু করল সিপিআই (এমএল) লিবারেশন এবং কংগ্রেস।
বুধবার দিল্লিতে কংগ্রেসের জাতীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক আছে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গোটা ১০ আসন নিয়ে তেজস্বী যাদবের দলের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছোতে পারেনি কংগ্রেস। আবার লিবারেশনও নতুন তালিকা তৈরি করে মঙ্গলবার তেজস্বীর হাতে তুলে দিতে চলেছে। ফলে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গেলেও শাসক-বিরোধী দুই জোটেই আসন নিয়ে টানাপড়েন অব্যাহত।
চিরাগের দল চাইছে শাহবাদ অঞ্চলে ৪০টি আসনে লড়াই করতে। অন্য দিকে, বিজেপি এবং নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল চিরাগদের ২৫টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি নয়। এমতাবস্থায় প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) দলের সঙ্গে সমঝোতা করার দরজা খোলা রাখল অধুনাপ্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের হাতে গড়া দল। রামবিলাসকে বিহারের রাজনৈতির মহলে ‘হাওয়া মোরগ’ বলে অভিহিত করা হত। আচমকা চিরাগ যে ভাবে পিকে-র সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখার বার্তা দিয়েছেন, তাতে অনেকেই তাঁর মধ্যে বাবার রাজনীতির কৌশলের ছাপ দেখছেন।
লিবারেশন গত বার ১৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছিল ১২টিতে। শতাংশের নিরিখে যা তাৎপর্যপূর্ণ। আবার সিপিএম এবং সিপিআই ছ’টি করে আসনে লড়ে জিতেছিল দু’টি করে আসন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বাম দলগুলির জেতা আসন ছিল ১৬টি। গত বারের ‘সাফল্য’ দেখিয়ে লিবারেশন এ বার একাই ৪০টি আসন দাবি করেছে। কিন্তু তাতে এখনও রাজি হয়নি কংগ্রেস এবং আরজেডি। জট কাটাতে ৪০ থেকে কিছুটা কমিয়ে নতুন তালিকা জমা দিতে চলেছে লিবারেশন। দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আলোচনা চলছে। আমরা আজ নতুন করে তালিকা দিচ্ছি।’’ সূত্রের খবর, ৪০ থেকে খানিকটা নমনীয় হয়ে ৩২-৩৩টি আসন দাবি করতে পারে লিবারেশন ।
তবে বাম দলগুলি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের জট কাটালেও হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, মুকেশ সাহানির বিকাশশীল ইনসান পার্টি, পশুপতি কুমার পারসের রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টির জন্য কতগুলি আসন পড়ে থাকবে, সেই সংখ্যায় তারা রাজি হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। যদিও তেজস্বীর আরজেডি ‘কৃচ্ছ্রসাধন’ করার মানসিকতা নিয়েই গোড়া থেকে এগোচ্ছে। অন্য শরিকদের সেই বার্তাও দিয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র। আরজেডি-সহ বাম দলগুলির নেতারা একান্ত আলোচনায় বলছেন, কংগ্রেসকে মাথায় রাখতে হবে তারা গত বার জেদ করে ৭০টি আসনে লড়ে মাত্র ১৯টিতে জিততে পেরেছিল। বাস্তবতা, সাংগঠনিক শক্তির দিকে তাকালে কংগ্রেস সেই দাবি করত না। এ বার সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি চাইছে না আরজেডি।
২৪৩ আসনের বিহারে দু’দফায় ভোট হবে। কমিশন সোমবার জানিয়েছে, বিহারের প্রথম দফার নির্বাচন হবে ৬ নভেম্বর। ওই দফায় ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ১০ অক্টোবর সেই সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা করা যাবে। তা যাচাইয়ের জন্য ১৮ তারিখ অবধি সময় পাওয়া যাবে। প্রার্থীরা নাম প্রত্যাহার করতে পারবেন ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে ১১ নভেম্বর। দ্বিতীয় দফায় মোট ১২২টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ওই দফার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে ১৩ অক্টোবর। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা করা যাবে। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রার্থীরা চাইলে নাম তুলে নিতে পারবেন। ফলে আগামী এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতা চূড়ান্ত করতে হবে দুই জোটকেই।