—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সোমবার বৈঠকে বসছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) শীর্ষকর্তারা। গত বছর অগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বৈঠকে বসতে চলেছে দুই দেশ। ২৫ থেকে ২৮ অগস্ট ঢাকায় চলবে সেই বৈঠক।
বিএসএফের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে ভারতীয় জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, সীমান্তের পরিকাঠামো, বিএসএফ জওয়ানদের উপর হামলার বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হবে বৈঠকে। তবে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে কি না, ওই বিবৃতিতে তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। সূত্রের খবর, বৈঠকে নজরে থাকতে পারে এই বিষয়টি। বাংলাদেশের সমাজমাধ্যম ‘দ্য ডেইলি স্টার’ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত থেকে সে দেশে মানুষজনকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি (পুশ-ইন) আলোচনায় তুলতে পারে বিজিবি।
২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ থেকে ২০ তারিখে দিল্লিতে বৈঠকে বসেন বিএসএফ এবং বিজিবি কর্তারা। সোমবার ঢাকায় আবার বৈঠকে বসবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতিনিধিদল। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল দলজিৎ সিংহ চৌধরি। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন বিজিবি প্রধান মহম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
বিএসএফের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুই দেশের আলোচনায় নজরে থাকবে বাংলাদেশে ভারতীয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, সীমান্তের পরিকাঠামো, বিএসএফ জওয়ান এবং ভারতীয় নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা, সীমান্তে অপরাধের মোকাবিলা, বেড়া নির্মাণ (সিঙ্গল রো), যুগ্ম ভাবে সীমান্ত পরিচালনার পরিকল্পনা। তবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে আলোচনা হবে কি না, তা স্পষ্ট করেনি ভারত। যদিও সম্প্রতি এই অনুপ্রবেশ নিয়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে।
‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত থেকে লোকজনকে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে কথা হতে পারে বৈঠকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সরকারি পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়েছে, ৭ মে থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত ভারত বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ২,১৯৬ জনকে পাঠিয়েছে। বিজিবির দাবি, যাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৩৯ জন মায়ানমারের নাগরিক। ভারতে রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তুদের হাই কমিশনারের খাতায় তাঁদের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। বিজিবি বলেছে, ফেরত পাঠানো লোকজনের মধ্যে ১০০ জন ভারতের নাগরিক। তাদের আরও দাবি, সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছ’জন ভারতীয়কে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক সন্তানসম্ভবা মহিলাও রয়েছেন। ওই ছ’জনের কাছে বাংলাদেশের ভিসা নেই। বিজিবির দাবি, যে ভাবে এই লোকজনকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে, তাতে ১৯৭৫ সালের ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম নির্দেশিকা, অতীতের ডিজি স্তরের বৈঠকে নির্ধারিত নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে খবর। আরও খবর, সীমান্তে হত্যার প্রসঙ্গও তোলা হতে পারে বিজিবির তরফে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সাল থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানেরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর বৈঠকে বসে থাকেন। সে সময়ে বছরে এক বার করে বৈঠক হত। ১৯৯৩ সালে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিবেরা স্থির করেন, বছরে দু’বার করে হবে এই বৈঠক। তার পর থেকেই প্রতি বছর দু’বার বৈঠকে বসে দুই দেশ। ফেব্রুয়ারির বৈঠকে সীমান্তে তারের বেড়া নিয়ে আলোচনা চলেছিল। এ বার কী কী বিষয় উঠে আসবে, নজর সে দিকে।