(বাঁ দিকে) যে ঘটনাকে ঘিরে বিতর্ক। গোমূত্র দিয়ে ‘শুদ্ধিকরণ’ করা হচ্ছে (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
মহারাষ্ট্রের পুণের এক দুর্গে নমাজ পড়াকে কেন্দ্র করে শোরগোল চলছে। ইতিমধ্যেই বিজেপি-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি এই ঘটনার বিরোধিতা করে পথে নেমেছে। বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে সংগঠনগুলির তরফে। আর এই ঘটনায় পুণেতে রাজনৈতিক উত্তাপও বাড়তে শুরু করেছে।
পুণের শনিবারওয়াড়া দুর্গে তিন মহিলার বিরুদ্ধে নমাজ পড়ার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদ, বিক্ষোভে নেমে পড়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি (যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। বিজেপি সাংসদ মেধা কুলকার্নির নেতৃত্বে মরাঠা সাম্রাজ্যের ওই দুর্গে ‘শুদ্ধিকরণ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুর্গের যে জায়গায় মহিলারা নমাজ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই জায়গাটিকে গোমূত্র নিয়ে ধুইয়ে ‘শুদ্ধ’ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, শিববন্দনারও আয়োজন করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি।
বিজেপি সাংসদ মেধা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পুণের এই ঐতিহাসিক দুর্গে এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মরাঠা সাম্রাজ্যের প্রতীক এই দুর্গে যে ধরনের কাজ করা হয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক এবং এই ঘটনায় প্রত্যেক পুণেবাসীর ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। সাংসদের কথায়, ‘‘এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। শনিবার ওয়াড়া দুর্গ নমাজ পড়ার জায়গা নয়। প্রশাসনের কাজে আর্জি, তারা যেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে।’’
কুলকার্নি আরও বলেন, ‘‘শিববন্দনার মাধ্যমে এবং গোমূত্র দিয়ে শুদ্ধিকরণের কাজ হয়েছে দুর্গে। আমরা গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাধা দেওয়া হয়।’’ বিজেপি সাংসদ মেধা কুলকার্নি ছাড়াও রাজ্যের মন্ত্রী নীতিশ রাণেও দুর্গে নমাজ পড়ার ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শনিবারওয়াড়ার একটা ইতিহাস আছে। এটি সাহসিকতার প্রতীক। এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’’ আর এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। অজিত পওয়ারের দল এনসিপি-র মুখপাত্র রূপালি পাটিল বিজেপি সাংসদের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপি সাংসদ হিংসায় উস্কানি দিচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা দায়ের করা উচিত। আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল মিম-এর মুখপাত্রের কণ্ঠেও একই সুর শোনা গিয়েছে। তিনিও বিজেপি সাংসদের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)-এর এক আধিকারিক এই ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরই অজ্ঞাতপরিচয় মহিলাদের বিরুদ্ধে নমাজ পড়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ঘটনাটিকে ঘিরে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় দুর্গের নিরাপত্তা আঁটসাঁট করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই দুর্গের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এএসআইয়ের। তাদের দাবিমতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। ইতিমধ্যেই দুর্গের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিক।