লক্ষ্য বিপিসিএল বেসরকারিকরণ, বাতিল আইন

২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, সংসদ বিপিসিএল এবং হিন্দুস্তান পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন (এইচপিসিএল) জাতীয়করণের জন্য পাস হওয়া আইন স‌ংসদ সংশোধন করলে, তবেই বেসরকারিকরণ করা যাবে সংস্থা দু’টিকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত

ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ভারত পেট্রলিয়াম কর্পকে (বিপিসিএল) পুরোপুরি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে আরও এগোবার আগে চুপচাপ সেই আইন বাতিল করল সরকার, যার হাত ধরে সংস্থাটির জাতীয়করণ হয়েছিল। যাতে বেসরকারি বা বিদেশি সংস্থার কাছে সেটি বিক্রি করার আগে সংসদের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন না পড়ে।

Advertisement

২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, সংসদ বিপিসিএল এবং হিন্দুস্তান পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন (এইচপিসিএল) জাতীয়করণের জন্য পাস হওয়া আইন স‌ংসদ সংশোধন করলে, তবেই বেসরকারিকরণ করা যাবে সংস্থা দু’টিকে।

এক সময় এই বিপিসিএলের নাম ছিল বার্মা শেল অয়েল কোম্পানি। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২৮ সালে। ভারতে কেরোসিনের ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে। ধীরে ধীরে সংস্থাটি তার পরের কয়েক বছরের মধ্যে আরও ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি প্রান্তে এবং পেট্রল পাম্প, লুব্রিকেন্ট, বিমান জ্বালানি ও এলপিজি-ল ব্যবসা শুরু করে। ১৯৭৬ সালে ওই বার্মা শেল গ্রুপ অব কোম্পানিজকেই অধিগ্রহণ করে ভারত সরকার এবং নাম দেয় ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, আইনের খাতায় অপ্রয়োজনীয় ভাবে পড়ে থাকা ১৮৭টি অচল ও অনাবশ্যক আইনকে নাকচ করেছে ২০১৬ সালের বাতিল ও সংশোধনী আইন (রিপিলিং অ্যান্ড অ্যামেন্ডিং অ্যাক্ট অব ২০১৬) । যার মধ্যে আছে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন বার্মা শেল জাতীয়করণের আইনও। কেন্দ্রের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দাবি, ‘‘ওই আইনটি খারিজ হয়ে গিয়েছে এবং বিপিসিএল-কে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য এখন আর সংসদের সায় লাগবে না।’’

সরকারি সূত্রের দাবি, দেশে তেলের খুচরো বিক্রিতে বহুজাতিক সংস্থাগুলির পা রাখার পথ করে দিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়াতে চায় কেন্দ্র। তাই বিপিসিএলে তাদের হাতে থাকা ৫৩.৩% শেয়ারের বেশির ভাগটাই বেচে দেওয়ার জন্য সহযোগী খোঁজা হচ্ছে।

তবে রাজস্ব ক্ষতি হবে জেনেও সম্প্রতি অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য কর্পোরেট কর কমানো-সহ নানা পদক্ষেপ করেছে সরকার। অথচ কর থেকে আয় কমছে। এই অবস্থায় রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই বিপিসিএল, কনটেনার কর্পোরেশন (কনকর), শিপিং কর্পোরেশন, নিপকো ও টিএইচডিসি মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এই পথে ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার কোটি রোজগারের আশা। বিলগ্নির জন্য মন্ত্রিসভার সায় চাওয়ার কথা ছিল। তবে বিপিসিএলের ক্ষেত্রে তার জাতীয়করণ আইন রদ হওয়ায় সেই সায় চাওয়ার আর প্রয়োজন পড়বে না। এ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নি থেকে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা তোলার লক্ষ্য সরকারের।

উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে বিপিসিএলের চারটি তেল শোধনাগার রয়েছে মুম্বই, কেরলের কোচি, মধ্যপ্রদেশের বিনা ও অসমের নুমালিগড়ে। সব মিলিয়ে ৩.৮৩ কোটি টন অশোধিত তেলকে জ্বালানিতে পরিণত করার ক্ষমতা রয়েছে সেগুলির। সংস্থার মোট পেট্রল পাম্প ১৫,০৭৮ টি এবং ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা ৬,০০৪।

সম্প্রতি আমেরিকার হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ করে ফিরেছেন নরেন্দ্র মোদী। মার্কিন বা পশ্চিম এশিয়ার সংস্থাগুলির আগ্রহ মাপতে তেল সংস্থা বিপিসিএল বিলগ্নির জন্য সেই হিউস্টনেই ‘রোড শো’ হবে। তবে বিলগ্নিকরণ দফতরের ইঙ্গিত, কাউকে না পাওয়া গেলে আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা আইওসিকেই বেচা হবে তাদের শেয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন