Jammu and Kashmir Terror Attack

হ্যাকিং ‘দুঃসাধ্য’! ভারতে নিষিদ্ধ বাছা বাছা চিনা অ্যাপে কথাবার্তা চলে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিদের, হাতিয়ার ‘স্যাটেলাইট ফোন’ও

নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের জন্য উপত্যকা অঞ্চলে যে মোবাইল অ্যাপগুলি ব্যবহার করে জঙ্গিরা, সেগুলি চিনে তৈরি এবং ভারতে নিষিদ্ধ। এই অ্যাপগুলিতে তথ্য গোপনের পন্থা (এনক্রিপশন) অনেক শক্তিশালী।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:০২
Share:

পহেলগাঁও হামলার চক্রান্তে ‘স্যাটেলাইট ফোন’ ব্যবহার করেছে জঙ্গিরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্ত করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। এখনও হামলাকারীদের কাউকে ধরা যায়নি। অনন্তনাগ-সহ কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশে চিরুনিতল্লাশি চালাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। সূত্রের খবর, গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের জন্য কয়েকটি বিশেষ চিনা অ্যাপ ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। পহেলগাঁও হামলার পরিকল্পনাও হয়েছিল ওই অ্যাপের মাধ্যমেই। এমনকি, ব্যবহার করা হয়েছিল চিনা ‘স্যাটেলাইট ফোন’। গোয়েন্দারা পহেলগাঁওয়ে ঘটনার দিনই ওই ধরনের একটি ফোনের উপস্থিতি টের পেয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র উল্লেখ করে এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন-নিউজ় ১৮।

Advertisement

সূত্রের দাবি, নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের জন্য উপত্যকা অঞ্চলে যে মোবাইল অ্যাপগুলি ব্যবহার করে জঙ্গিরা, সেগুলি ভারতে নিষিদ্ধ। ২০২০ সালে গালওয়ানে চিনা ফৌজের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চিনের ওই অ্যাপগুলি নিষিদ্ধ করেছিল ভারত সরকার। এই অ্যাপগুলিতে তথ্য গোপনের পন্থা (এনক্রিপশন) অনেক শক্তিশালী এবং আধুনিক। ফলে এগুলি সহজে হ্যাক করা যায় না। এই অ্যাপের মাধ্যমে কী কথাবার্তা চলছে, বাইরে থেকে সহজে তার নাগাল পাওয়া যায় না। সেই কারণেই এই অ্যাপগুলি বেছে নিয়েছে জঙ্গিরা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার দিন ওই এলাকাতেই একটি চিনা ‘স্যাটেলাইট ফোন’ ছিল। গোয়েন্দাদের র‌্যাডারে তা ধরা পড়েছে। কিন্তু ফোনটি উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত, জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চালিয়ে গিয়েছিল এই ফোন ব্যবহার করেই। ‘স্যাটেলাইট ফোন’ কী? ‘স্যাটেলাইট ফোন’ আর পাঁচটা সাধারণ মোবাইল ফোনের মতোই দেখতে। কিন্তু মোবাইলের মতো টাওয়ারে তা চলে না। কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের সঙ্কেত ব্যবহার করে এই ফোনে কথোপকথন চলে। এই ফোনের সুবিধা হল, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা বা ঘন জঙ্গলের ভিতরে সাধারণ ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তবে ‘স্যাটেলাইট ফোনে’ সেই সমস্যা নেই। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যে কোনও দুর্গম এলাকাতেও এই ফোন ব্যবহার করা যায়। তদন্তকারীদের ধারণা, পহেলগাঁওয়ের পরিকল্পনায় চিনের ‘স্যাটেলাইট ফোন’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এনআইএ এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছে।

Advertisement

চিনা অ্যাপের বিশেষত্ব

  • জঙ্গিদের ব্যবহৃত চিনা অ্যাপগুলিতে রয়েছে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ প্রযুক্তি। এর ফলে যিনি মেসেজ পাঠাচ্ছেন এবং যাঁকে পাঠাচ্ছেন, কথোপকথন শুধু তাঁদের মধ্যেই থাকে।
  • ‘কোয়ান্টাম রেজ়িস্ট্যান্স অ্যালগরিদম’ এই অ্যাপগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এটি গোপনীয়তা রক্ষার আরও এক উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তি। কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়েও এই অ্যাপ হ্যাক করা যায় না।
  • এই ধরনের অ্যাপে ব্যবহার করা হয়েছে স্টেগ্যানোগ্রাফি প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে ছবি এবং ভিডিয়োর মতো ফাইলের আড়ালে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ লুকিয়ে রাখা যায়। ফলে তা চোখের সামনে থাকলেও ধরা পড়ে না।
  • হ্যাকিং এড়াতে এই অ্যাপগুলির অন্যতম শক্তি হল এদের গতি। মিলিসেকেন্ডের মধ্যে এই অ্যাপ তথ্য আদানপ্রদান করতে পারে। পাশাপাশি, বার বার অ্যাপগুলি রেডিয়ো ফ্রিকুয়েন্সি বদলে ফেলে। ফলে এতে আড়ি পাতা যায় না।
  • ‘স্যাটেলাইট ফোনে’ স্থলজ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় না। ফলে স্থানীয় প্রযুক্তিকে এর মাধ্যমে এড়িয়ে যাওয়া সহজ।

গোয়েন্দাদের এড়াতে এর আগেও বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পন্থা অবলম্বন করেছিল। আইসিস ব্যবহার করেছিল টেলিগ্রাম। আল কায়েদা পর্নোগ্রাফির সাইটে স্টেগ্যানোগ্রাফি ব্যবহার করে তথ্য আদানপ্রদান করত। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই পরে এই কৌশল ধরে ফেলে। কাশ্মীরের হামলাতেও একই ভাবে প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেছিল জঙ্গিরা, অনুমান তদন্তকারীদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement