Supreme Court

রাজ্যপাল বিল ফেলে রাখলে কি আদালত নীরব থাকবে? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের, অভিমত প্রকাশ রাষ্ট্রপতির ‘বাধ্যবাধকতা’ নিয়েও

এপ্রিল মাসে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বিল ছাড়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ভূমিকা নিয়ে যা বলেছিল, সেই বিষয়টিও উত্থাপিত হয় বৃহস্পতিবারের শুনানিতে। সেখানে আগের নির্দেশকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করেছে কেন্দ্র।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ১৭:০২
Share:

সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপাল যদি দিনের পর দিন ফেলে রাখেন, কোনও সিদ্ধান্ত না নেন, তা হলে কি আদালত নীরব থাকবে? প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যপালকে সময় বেঁধে দেওয়া হলে ‘সাংবিধানিক অস্থিরতা’ তৈরি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের এই যুক্তিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করালেও, রাষ্ট্রপতির ‘বাধ্যবাধকতা’র প্রশ্নে কেন্দ্রের যুক্তিতে সায় দিল শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ।

Advertisement

রাজ্যপাল কোনও বিল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না-পারলে তিনি তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে বিলের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করতে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া উচিত রাষ্ট্রপতির— এই মর্মে এর আগে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। গত বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্র যে যুক্তি দেখিয়েছে, তা মেনে নিয়েছে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ।

তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল সে রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিল আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ রাজ্যপালের আচরণকে ‘বেআইনি’ বলে উল্লেখ করে বিল ছাড়ার বিষয়ে সময় বেঁধে দিয়েছিল। গত এপ্রিল মাসের সেই নির্দেশে রাজ্যপালকে এক মাস এবং রাষ্ট্রপতিকেও তিন মাসের মধ্যে পদক্ষেপ করতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গেও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে একাধিক বিল আটকে রাখার অভিযোগ তুলে আসছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

Advertisement

শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলে কেন্দ্র। তাদের প্রশ্ন হল, শীর্ষ আদালত কি এ ভাবে রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিতে পারে? রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও গত ১৩ মে ওই বিষয়ে ১৪টি সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের মতামত জানতে চান। তার পরেই বিষয়টির মীমাংসা করতে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করা হয় শীর্ষ আদালতে। এই বেঞ্চে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি বিআর গবই, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি এএস চান্দুরকর।

গত বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানিতেই রাজ্যপালের ‘কর্তব্য’ নিয়ে শীর্ষ আদালতের আগের নির্দেশের বিরুদ্ধে সওয়াল করে কেন্দ্র। তাদের বক্তব্য, রাজ্যপাল কোনও বিলে সই করবেন, কি করবেন না, ফিরিয়ে দেবেন নাকি রাষ্ট্রপতিকে পাঠানোর জন্য ফেলে রাখবেন, সে বিষয়ে আদালত প্রশ্ন করতে পারে না। এ সব একান্তই রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত। বিচারব্যবস্থা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এ-ও বলেন, রাজ্যপাল এবং রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে অচলাবস্থা তৈরি হলে, তার সমাধান রাজনৈতিক ভাবে হওয়া উচিত। আর যদি বিল ছাড়ার বিষয়ে রাজ্যপালকে সময় বেঁধে দিতেই হয়, সে ক্ষেত্রে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সংসদ নেবে।

জবাবে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, সংবিধান অনুযায়ী এক রাজ্যপালের যা করা উচিত, তিনি যদি তা না করেন, বছরের পর বছর যদি তিনি বিল আটকে রাখেন, সে ক্ষেত্রে কি আদালত এই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ খতিয়ে দেখবে না? গণতন্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রশ্নের মুখে দাঁড়ালে কিছুই বলবে না আদালত? রাজ্যপাল বিল ফেলে রাখলে সে ক্ষেত্রে কী করণীয় হবে একটি নির্বাচিত রাজ্য সরকারের? সেখানকার মানুষেরই বা কী হবে?

সলিসিটর জেনারেল মেহতার মত, রাজ্যপালকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার অর্থ, ভারতীয় সংবিধানে আইনসভা (সংসদ), সরকার ও বিচারবিভাগের ক্ষমতার মধ্যে যে সুক্ষ্ম ভারসাম্য রয়েছে, তা হারানো। শাসন পরিচালনার একটি অঙ্গকে এমন ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া, যার অধিকার তাদের নেই। মেহতা এ-ও বলেন, ‘‘দেশের সব সমস্যা সুপ্রিম কোর্টে মেটানোর প্রয়োজন নেই। ঠিক যে ভাবে সংসদ কোনও মামলার বিচারের জন্য আদালতকে সময় বেঁধে দিতে পারে না, একই ভাবে আদালতও কোনও রাজ্যপালকে সময় বেঁধে দিতে পারে না।’’

কিন্তু প্রধান বিচারপতিও মনে করিয়ে দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক। তাই কোনও রাজ্যপাল যদি রাজ্য সরকারের কাজকর্ম অচল করে দেন, তা সুপ্রিম কোর্ট হতে দিতে পারে না। তবে এ ক্ষেত্রে বিচারবিভাগের সক্রিয়তা যাতে কখনওই অতিসক্রিয়তায় (‘জুডিশিয়াল টেরোরিজ়ম’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন প্রধান বিচারপতি) পরিণত না হয়, তা-ও মাথায় রাখতে বলেছে সাংবিধানিক বেঞ্চ।

এপ্রিল মাসে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বিল ছাড়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ভূমিকা নিয়ে যা বলেছিল, সেই বিষয়টিও উত্থাপিত হয় বৃহস্পতিবারের শুনানিতে। আগের নির্দেশকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করেছেন মেহতা। তা মেনে নিয়েছে সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যদি সমস্ত বিলের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েই রাষ্ট্রপতিকে নিজেদের মতামত দিতে থাকে, বিচারবিভাগের বাকি কাজকর্ম কারা করবে? কারণ প্রতিটি বিল নিয়ে আলোচনাতেই তো পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করতে হবে। আর তা ছাড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৩ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেবেন কি না, তা একেবারেই তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement