শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং তৃণমূলনেতা কুণাল ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
দমদমের কেন্দ্রীয় জেল ময়দানের সভা থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের বিষয়ে সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংসদে পেশ হওয়া নতুন বিলের প্রসঙ্গও তুলেছেন। দুর্নীতি নিয়েই তৃণমূলকে নিশানা করতে গিয়ে তুলেছেন জেলে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জেল থেকে আপাতত জামিনে বাইরে থাকা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের প্রসঙ্গও। মোদীর বক্তৃতা শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরেই পাল্টা শুভেন্দু অধিকারীর নারদ গোপন ক্যামেরা অভিযানের (স্টিং অপারেশন) ফুটেজ প্রকাশ্যে এনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দাগল তৃণমূল।
রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং তৃণমূলনেতা কুণাল ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে এলইডি স্ক্রিনে মোদীর বক্তৃতা এবং শুভেন্দুর নারদের ফুটেজ একসঙ্গে দেখান। তার পরে কুণাল বলেন, ‘‘যে নেতাদের বিরুদ্ধে বিজেপি-ই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি করেছিল, সেই রকম যে যে নেতা এখন বিজেপি-তে রয়েছেন, তাঁদের আগে দল থেকে বহিষ্কার করার সাহস দেখান মোদী। তার পর দুর্নীতি নিয়ে অন্যদের দিকে আঙুল তুলবেন।’’
সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ পর্বে ১৩০তম সংবিধান সংশোধন বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার অন্যতম বিষয় হল, কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রী যদি কোনও মামলায় ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তা হলে তাঁকে মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হবে। যাকে পিছনের দরজা দিয়ে বিরোধীশাসিত রাজ্যের সরকার দখলের কৌশল বলে অভিহিত করেছে বিরোধীরা। দমদমের সভায় সেই বিলের কথাও বলেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। শুক্রবার মোদী বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ মামলায় গ্রেফতারির পরেও এক মন্ত্রী পদ ছাড়তে চাননি। তৃণমূলের আরও এক মন্ত্রী রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন। তিনিও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাননি। মানুষের ভাবনা নেই এঁদের। এঁরা জনতাকে ধোঁকা দিয়েছেন। এঁদের সরকারি পদে থাকার অধিকার আছে?’’
পাল্টা শুভেন্দুর ফুটেজ দেখিয়ে শশী বলেন, ‘‘পারলে ব্যবস্থা নিয়ে দেখান। সরকারি প্রক্রিয়া তো দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়। বিজেপি-র সদিচ্ছা থাকলে এঁদের দল থেকে তাড়াক। আসলে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি নির্মূল করতে চান না। তিনি চান বিরোধীদের নির্মূল করতে।’’
মোদী বাংলায় পা রাখার আগেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পাঁচটি প্রশ্ন ছুড়েছিল তৃণমূল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়া। মোদী দমদমের সভা থেকে বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের টাকা মানুষকে দেওয়ার বদলে তৃণমূল এখানে তাদের ক্যাডারদের পিছনে খরচ করেছে।’’ পাল্টা শ্বেতপত্র প্রকাশ করার দাবি তুলে কুণাল বলেন, ‘‘মোদীর রাজ্য গুজরাতের মন্ত্রীর ছেলে ১০০ দিনের কাজের টাকা লুট করে গ্রেফতার হয়েছেন। বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে সব থেকে বেশি ভুয়ো জব কার্ড। সেই রাজ্যগুলিতে টাকা বন্ধ হয় না, তা হলে বাংলায় কেন?’’
ভিন্রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর আক্রমণ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সরব তৃণমূল। যে প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি-কে ‘বাংলা বিরোধী’ সাব্যস্ত করার ভাষ্য তৈরি করছে বঙ্গের শাসকদল। সেই আবহে শুক্রবার মোদী প্রশ্ন তুলেছেন, এই রাজ্যের এত শ্রমিক বাইরের রাজ্যে কেন রয়েছেন? কারণ, পশ্চিমবঙ্গে কাজ নেই। বিজেপি সরকারে এলে তবেই প্রকৃত বিকাশ হবে। পাল্টা তৃণমূল বলেছে, বিভিন্ন রাজ্যের শ্রমিকেরা অন্য রাজ্যে কাজ করতে যান। এই ধারা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মোদীর উদ্দেশে কুণাল বলেন, ‘‘বাংলাতেও ভিন্রাজ্যের দেড় কোটি মানুষ কাজ করেন। সাহস থাকলে প্রধানমন্ত্রী বলুন, যিনি যে রাজ্যের বাসিন্দা, তিনি সেই রাজ্যেই কাজ করবেন। অন্যত্র যাবেন না।’’
২০২৬ সালের ভোটে তৃণমূলকে তাড়িয়ে বিজেপি-কে আনার কথা বলেছেন মোদী। যেমন বলেছিলেন ২০২১ সালের ভোটের আগেও। পাল্টা মন্ত্রী শশী বলেন, ‘‘মোদী বার বার বাংলায় আসতে পারেন। কিন্তু বিজেপি বাংলায় আসবে না।’’ এই প্রসঙ্গেই কুণাল বলেন, ‘‘রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি, প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহসভাপতি, প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ মোদীর সভায় আস্থা রাখতে পারেননি। তিনি চলে গিয়েছেন বেঙ্গালুরুতে। রবিশঙ্করের আশ্রমে চলে গিয়েছেন দিলীপ শঙ্কর। যে প্রধানমন্ত্রীর উপর তাঁর দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিই আস্থা রাখতে পারেন না, তাঁর উপর বাংলার মানুষ কী করে আস্থা রাখবেন?’’