অভিযোগ আগেই উঠেছিল। রাফাল নিয়ে এ বারে আরও হাতে-গরম নথি চলে এল রাহুল গাঁধীর কাছে। আর তা দিয়েই নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ধার বাড়াল কংগ্রেস।
রাফাল চুক্তিতে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত দিতে ফ্রান্সের দাসো সংস্থা যে ‘বাধ্য’ হয়েছিল, প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সোয়া ওলাঁদ আগেই তা বলেছিলেন। জবাবে ওলাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আজ কংগ্রেস গত বছর মে মাসে দাসো-র সিইও লইক সেগালেনের সঙ্গে সংস্থার দুই শ্রমিক সংগঠনের বৈঠকের বিবরণের নথি প্রকাশ্যে আনল। আর তাতেও ওলাদেঁর দাবিরই প্রতিধ্বনি।
রাহুলের নির্দেশে দলের যোগাযোগ মোর্চার প্রধান রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আজ এআইসিসি দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন। ২০১৭ সালের ১১ মে মাসে সংস্থার শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে দাসো-র সিইও লইক সেগালেনের বৈঠকের নথি প্রকাশ্যে আনেন রণদীপ। ফরাসি ভাষায় লেখা সেই নথি অনুবাদও করা হয়। তাতে স্পষ্টই বলা রয়েছে, নাগপুরে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র একটি পুরোদস্তুর প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়। রাফাল চুক্তি করার জন্য রিলায়্যান্সের সঙ্গে সমঝোতা করাটা বাধ্যতামূলক ছিল। এই চুক্তির জেরে দাসো এভিয়েশন ৪৯ শতাংশ এবং রিলায়্যান্স ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যৌথ ভাবে কাজ করবে।
রণদীপের অভিযোগ, ঠিক এই কথাই তো ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন। তিনিও জানিয়েছিলেন, অনিল অম্বানীর সংস্থার নাম ভারত সরকারই প্রস্তাব করেছিল। তা হলে কীসের ভিত্তিতে সরকারের মন্ত্রীরা এখনও উল্টো কথা বলে আসছেন? আর প্রধানমন্ত্রীই বা নীরবতা কবে ভঙ্গ করবেন?
বিজেপি ছেড়ে আজই রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে কংগ্রেসে যোগ দেন অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী যশবন্ত সিংহের পুত্র মানবেন্দ্র। এআইসিসি-র সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তিনিও। কংগ্রেসে যোগ দিয়ে প্রথম দিনেই তিনি বলেন, ‘‘গোয়ার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের উপর আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। রাফালের যাবতীয় রহস্য তাঁর ফাইলে নথিভুক্ত আছে।’’ মানবেন্দ্রর কথার সূত্রে ধরে রণদীপও বলেন, ‘‘খুব ওজনদার কথা বলেছেন মানবেন্দ্র সিংহ।’’
ঘটনা হল, রাফাল নিয়ে রাহুল গাঁধী রোজ মোদীকে নিশানা করলেও এখনও পর্যন্ত বাকি বিরোধী দলগুলি সে ভাবে সক্রিয় নয়। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মায়াবতীর মতো বিরোধী নেত্রীরা। কংগ্রেসের এক নেতার অবশ্য আশা, ‘‘উপযুক্ত সময় এলেই রাফালের দুর্নীতি নিয়ে সব বিরোধী এক সুরে সরব হবে। একটু অপেক্ষা করুন।’’ কংগ্রেসের মতে, সব ক’টি বিরোধী দলের যুব মোর্চার প্রতিনিধিরা রাফাল-সহ বাকি বিষয়ে একজোট হয়ে ইতিমধ্যেই রাজধানীতে প্রতিবাদ করেছেন। ধীরে ধীরে প্রথম সারির নেতারাও তাতে যোগ দেবেন। কারণ সকলেই এখন বুঝতে পারছেন, রাফালে দুর্নীতি হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই সেই দুর্নীতির কারিগর।