Coronavirus in India

অর্ধেক দিন গিয়েছে করোনা-বিধি শুনেই, হুঁশ ফিরেছে ক’জনের?

যে যে সুরক্ষা-বিধি পালনের কথা বলা হয়েছে, সেগুলিকে অগ্রাহ্য করেই বেশির ভাগ মানুষ চার দিকে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং এখনও তা করে চলেছেন।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:২১
Share:

অসচেতন: অতিমারি আবহে প্রথম থেকে কোভিড-বিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও এখনও হুঁশ ফেরেনি অনেকের। রবিবার, চিড়িয়াখানায় ঢোকার মুখে সাবওয়েতে দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে এ ভাবেই ভিড় জমালেন দর্শকেরা। অনেকের মুখে নেই মাস্কও। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

কাউকে ফোন করতে গেলেই সতর্কবার্তা। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করার। গত এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক জন ভারতীয় সেই বার্তা শুনতে মোট কত সময় খরচ করেছেন? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, হিসেব শুনলে চমকে যেতে হবে। প্রায় ১২ ঘণ্টা! অর্থাৎ একটি গোটা দিনের অর্ধেক। তা সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হুঁশ ফেরেনি!

Advertisement

কারণ, যে যে সুরক্ষা-বিধি পালনের কথা বলা হয়েছে, সেগুলিকে অগ্রাহ্য করেই বেশির ভাগ মানুষ চার দিকে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং এখনও তা করে চলেছেন। ‘নিয়মরক্ষা’র সতর্কবার্তায় আদৌ কোনও কাজ হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন স্বভাবতই উঠছে।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই কোনও ফোন করার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে সতর্কবার্তাটি গ্রাহকদের শোনানো হচ্ছে, সেটির সময়সীমা প্রায় ৩০ সেকেন্ড। এক জন ভারতীয় যদি দিনে গড়ে পাঁচটি ফোন করে থাকেন, তা হলে ওই বার্তা শুনতেই তাঁর সময় খরচ হয়েছে ১৫০ সেকেন্ড, অর্থাৎ আড়াই মিনিট। সেই হিসেবে এ জন্য এক মাসে তাঁর খরচ হয়েছে ৭৫ মিনিট, অর্থাৎ এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট। আর গত পয়লা এপ্রিল থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, এই ২৭৫ দিনে শুধু সতর্কবার্তা শুনেই তাঁর ব্যয় হয়েছে ১১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। যা প্রায় অর্ধেক দিন!

Advertisement

টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া-র (ট্রাই) সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা (ওয়্যারলেস সাবস্ক্রাইবার) প্রায় ১১৫ কোটি। এই সংখ্যাতেই স্পষ্ট যে, ফোন করার আগে সুরক্ষাবার্তাটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কাছেই পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সংক্রমণ শুরুর প্রাথমিক পর্বে মনে হচ্ছিল এই ধরনের বার্তা খুব জরুরি। কারণ, সেটি প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, শুধু দেশই নয়, সারা বিশ্বেই একটি আপৎকালীন পরিস্থিতি চলছে। কিন্তু যত দিন এগিয়েছে বোঝা গিয়েছে, সুরক্ষাবার্তা নিয়ে বেশির ভাগ লোকেরই মাথাব্যথা নেই।

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মাস্ক পরা, হাত পরিষ্কার রাখা, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা-সহ সংক্রমণ প্রতিরোধের বার্তা মানুষ অনেক বার শুনে নিয়েছেন। কিছু মানুষ ওই সব বিধি পালন করেছেন বা করছেন, তবে বেশির ভাগ লোকই তা অগ্রাহ্য করছেন।’’ আর এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয় সরকারের তরফেই নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ফলে সুরক্ষা-বার্তাটি শুধুই যেন নিয়মরক্ষায় বা সরকারি তরফে দায় ঝেড়ে ফেলায় পরিণত হয়েছে!’’ কানপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’-র ম্যাথমেটিক্স ও স্ট্যাটিস্টিক্সের অধ্যাপক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সতর্কবার্তা মেনে চলার মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ভারতের মতো ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশে নেই। ফলে পুরো বিষয়টা প্রচারেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।’’

যদিও করোনা-অবসাদ সামলাতে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টস’ গঠিত ‘ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্ক ফোর্স’-এর সদস্য প্রশান্তকুমার রায় জানাচ্ছেন, সুরক্ষাবার্তার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কারণ করোনা সংক্রমণের বিষয়টি ওই বার্তা প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিচ্ছে। ‘‘কিন্তু সমস্যা হল, সংশ্লিষ্ট সুরক্ষাবার্তায় কোনও বৈচিত্র না থাকায় এবং দিনে একাধিক বার বা জরুরি সময়ে ফোন করতে গিয়েও কিছুটা বাধ্য হয়ে শুনতে হওয়ায় তা গুরুত্ব হারাচ্ছে। যে কারণে বিরক্তি, একঘেয়েমি তৈরি হয়েছে।’’ রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থার প্রাক্তন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সেল্‌স ও মার্কেটিং) অশোককুমার ঘোড়ই বলছেন, ‘‘যাঁরা সচেতন, তাঁরা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এক বার ওই সতর্কবার্তা শুনেই নিয়ম পালন করবেন। কিন্তু যাঁরা নিয়মই মানতে চান না, তাঁদের হাজার বার সুরক্ষা-বিধি শোনালেও কাজ হবে না। সব দায় সরকারের হতে পারে না। মানুষকেও সংক্রমণ রোখার দায়িত্ব নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন