ঘরে ফেরা। ছবি: পিটিআই।
শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ অগ্রাহ্য করে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় শনিবার গোটা দিন লক্ষ লক্ষ কাজহারা দিনমজুর ভিড় জমিয়েছিলেন গ্রামে ফেরার বাস ধরতে। সেই বাসে গাদাগাদি করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সফরও করেছেন তাঁরা। লকডাউনের পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা এবং সেই কারণে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ সম্ভাবনা নিয়ে এ ভাবে গত কালই মুখ পুড়িয়েছে কেন্দ্র। আজ তাই সকাল থেকেই অবস্থান বদল করল মোদী সরকার। সেই সঙ্গে বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়ল রাজ্যগুলির ঘাড়ে। আজ কেন্দ্র ঘোষণা করে দিয়েছে, সমস্ত রাজ্যের সীমানা সিল করে দেওয়া হবে। লকডাউন চলাকালীন কেউ এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে পারবেন না। শুধু মাত্র পণ্য সরবরাহে ছাড়। পাশাপাশি গত কাল আনন্দবিহার বাস টার্মিনাস থেকে যে হাজার হাজার শ্রমিক উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের গ্রামে ফিরেছেন, তাঁদের দিকে নজর রাখার নির্দেশও রাজ্যকে দিয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, লকডাউন অমান্য করে নিজ রাজ্যে পা দেওয়া মাত্র তাঁদের ১৪ দিনের কোয়রান্টিনে যেতে হবে। এই কাজ এবং কোয়রান্টিনের সময়ে দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের। সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকেই সব চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজের সন্ধানে ভিন্ন রাজ্যে যান। এ ক্ষেত্রে তাদের উপর বাড়তি দায়িত্ব এল।
আজ সকালে করোনা মোকাবিলার জন্য তৈরি হওয়া মেকানিজমের অধীনে অন্য দিনের মতোই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিব অনলাইন বৈঠকে বসেন রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবের সঙ্গে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্যগুলিকে। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পূণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, “সীমানা সিল করা এবং ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক পৌঁছনো মাত্র তাঁকে কোয়রান্টিন করায় সংক্রমণ রোখা যাবে। এই শ্রমিকদের দেখভালের জন্য প্রয়োজনে স্টেট ডিজাস্টার রিলিফ ফান্ড থেকে এই খরচের অর্থ নেওয়া যেতে পারে। লকডাউনের সময়ে কোনও মালিক কর্মীদের বেতন কাটতে পারবেন না। নির্ধারিত সময়েই বেতন দিতে মালিকপক্ষ বাধ্য থাকবে। শ্রমিকরা যে যেখানে রয়েছেন তাঁদের এক মাসের ভাড়া বাড়িওয়ালাকে মকুব করে দিতে হবে।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবদের কাছে লকডাউন চলাকালীন বিধিনিয়ম জানিয়ে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না-করেই লকডাউন ঘোষণা করেছে— এই অভিযোগ কাল থেকেই তুলতে শুরু করেছিল বিরোধী শিবির। আজও কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেছেন, “লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক হেঁটে নিজেদের গ্রামে ফেরার চেষ্টা করছেন। দিনমজুরি হারিয়ে, খাদ্য এবং মাথার ছাদ খুইয়ে তাঁরা বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছেন। এঁদের বাসস্থান এবং অর্থ দিয়ে সাহায্য করা দরকার।’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “লকডাউনের ঠিক পরেই আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম, সরকার যত ক্ষণ না দিল্লির সাম্প্রদায়িক অশান্তির শিকার হওয়া মানুষ ও অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকের ব্যবস্থা করছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াকে রোখা যাবে না। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি।’’
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের আশ্বাস সত্ত্বেও লাখো লোক দিল্লি ছাড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে হাঁটতে শুরু করায় অস্বস্তিতে পড়েছে দিল্লি সরকার। দিল্লি সরকারের পক্ষে আজ জানানো হয়েছে, ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের জন্য ৫৬৮টি ত্রাণকেন্দ্র খোলা হয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। সেখানে তিনবেলা খাবার দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২৩৮টি রাত্রিকালীন আবাস তৈরি করা হয়েছে। প্রতিদিন ৪ লক্ষ লোককে খাওয়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের। তার পরে দিল্লি ছাড়ার কারণ নেই।