তামিলনাড়ুর মন্ত্রী কে টি রাজেন্দ্র বালাজি। ছবি: টুইটার।
কমল হাসনের জিভ কেটে নেওয়ার হুমকি দিলেন তামিলনাড়ুর মন্ত্রী কে টি রাজেন্দ্র বালাজি। সোমবার হাসন মন্তব্য করেন, স্বাধীন ভারতের প্রথম সন্ত্রাসবাদী নাথুরাম গডসে হিন্দু ছিলেন। সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই এই হুমকি দিয়েছেন বালাজি। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম হয় না। না হিন্দু, না মুসলিম, না খ্রিস্টান। কিন্তু কমল হাসন গডসেকে হিন্দু সন্ত্রাসবাদী বলেছেন। এমন মন্তব্যের জন্য ওঁর জিভ কেটে নেওয়া উচিত।”
বালাজি আরও বলেন, “হাসন সমাজে বিষ ছড়াচ্ছেন। তাঁর প্রত্যকটা কথাতেই বিষ রয়েছে। শুধু তাই নয়, জনসভায় দাঁড়িয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে সমাজে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে হাসনের দল। নির্বাচন কমিশনের উচিত এখনই এই দলকে নিষিদ্ধ করা।”
কমল হাসনের এই মন্তব্য নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। পাঁচ দিন কমলের উপর পাঁচ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করার দাবি জানিয়েছে তারা। বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, এ ধরনের বিবৃতি দিয়ে কমল হাসন কোটি কোটি হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে উস্কানি দিচ্ছেন।
রবিবার রাজ্যের কারুর জেলায় এক জনসভায় দাঁড়িয়ে হাসন বলেছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের প্রথম সন্ত্রাসবাদী এক জন হিন্দু ছিলেন। সেই সন্ত্রাসবাদী হলেন গাঁধীজির হত্যাকারী নাথুরাম গডসে। এর পাশাপাশি কমল আরও বলেন, “সভায় অনেক মুসলিম আছেন বলেই এ কথা বললাম, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। গাঁধীজির মূর্তির সামনে দাঁড়িয়েই এ কথা বলছি।” তারঁ সেই মন্তব্যের পর ব্যাপক হইচই পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে। বিজেপি-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর রোষের মুখে পড়তে হয় হাসনকে। রাজ্য বিজেপির প্রধান তামিলিসাই সৌন্দরাজন বলেন, “সন্তুষ্টির রাজনীতি করছেন হাসন। এমন মন্তব্য করে ভয়ঙ্কর আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছেন। এখনই ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নির্বাচন কমিশনের।”
আরাভাকুরুচিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস বেশি। সৌন্দারাজন বলেন, “এমন একটা এলাকায় দাঁড়িয়ে হিন্দু সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ উস্কে দিয়ে সংখ্যালঘু ভোট টানতে চাইছেন হাসন।” পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, শ্রীলঙ্কায় যখন বিস্ফোরণ হয়েছিল তখন কেন চুপ ছিলেন হাসন? কেন কোনও মতামত দিতে দেখা যায়নি তাঁকে?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বলেন, “কংগ্রেসের সুরে কথা বলছেন কমল হাসন। হিন্দুদের দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। শিবসেনাও কমল হাসনের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। দলের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত বলেন, “ কমল হাসন এক জন ভাল অভিনেতা। কিন্তু তিনি যে তথ্য তুলে ধরতে চাইছেন সেটা সম্পূর্ণ ফ্লপ। তাঁদের ধর্মকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়াটা কখনওই মেনে নেবেন না হিন্দুরা। কমল হাসন ও দিগ্বিজয় সিংহের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। প্রচারে থাকার জন্য এ ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন কমল।”
বিজেপি, শিবসেনা-সহ বহু রাজনৈতিক দল কমলের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করলেও কংগ্রেস এবং দ্রাবিড় কাজাঘম (ডিকে) তাঁর এই মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে। টিএনসিসি প্রেসিডেন্ট কে এস আলাগিরি বলেন, “ আমি হাসনের মতামতের সঙ্গে ১০০০ শতাংশ সহমত। অন্য দিকে, ডি কে প্রধান কে ভিরামণি বলেন, আরএসএস-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন গডসে।
আরজেডি নেতা তেজস্বীও কমলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “কমলের মন্তব্যে কোনও ভুল দেখছি না আমি।”
আরও পড়ুন: স্বাধীন ভারতে প্রথম সন্ত্রাসবাদী তো হিন্দুই ছিলেন, কমল হাসনের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক
আরও পড়ুন: ভোটযুদ্ধে বেড়েছে ধনকুবের, ভোটে কোটিপতি প্রার্থী ২২৯৭ জন