তিতলি। ছোট্ট কোনও মিষ্টি মেয়ের নাম নয়। ভয়ঙ্কর এক ঘূর্ণিঝড়। তিতলি মানে তো আসলে প্রজাপতি। কোন দেশ রাখল এমন নাম?
১২০ থেকে আস্তে আস্তে ১৪৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগ নিয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়, তাণ্ডব চালিয়েছে ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে।
প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শুধু মাত্র ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকা থেকে। কেন্দ্রাপাড়া, গঞ্জাম-সহ ১৭টি জেলায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। খোলা হয়েছে ১১১২টি ত্রাণ শিবির।
শুধুমাত্র গঞ্জাম ও জগৎসিংহপুর থেকেই ১২৩ জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ভারতীয় নৌ-বাহিনী পারাদীপ ও গোপালপুর থেকে উদ্ধার করেছে আট মৎস্যজীবীকে।
ওড়িশার খুরদা, কটক, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, সম্বলপুর, ভদ্রকের পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের টিম। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিপজ্জনক বাড়ি থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যুতের কোনও তার বা খুঁটির সংস্পর্শে একেবারেই যাতে কেউ না আসেন, বলা হয়েছে এমনটাও।
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের অবস্থাও মারাত্মক এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে। তছনছ হয়ে গিয়েছে পালাসা স্টেশন। প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন। রেড অ্যালার্টে বলা হয়েছে, মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যেন না যান। ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলের সর্বত্রই পর্যটকদের ক্ষেত্রে সমু্দ্রে নামায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গেও এই ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তিতলি নিয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে গুজবও। কিন্তু তাতে কান দিতে বারণ করছেন বিশেষজ্ঞরাই। বরং সংবাদমাধ্যমের উপর ভরসা রাখতে বলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোনে যাতে চার্জ থাকে, ওয়াটারপ্রুফ বাক্সেই জরুরি নথি রেখে দিন, ওষুধ-সহ এমারজেন্সি কিট সঙ্গে রাখুন, গবাদি পশুদের দিকেও খেয়াল রাখুন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ঝড়-বৃষ্টিতে দরজা ও জানলা বন্ধ করে রাখতে হবে। ফুটিয়ে কিংবা ক্লোরিন মেশানো জল খেতে হবে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিলেই। অফিসিয়াল অ্যালার্টেই ভরসা রাখতে বলছেন তাঁরা। কিন্তু এ হেন মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের এমন নাম কে দিল?
আটটি ভারত মহাসাগরীয় দেশ (উত্তর) ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড প্রত্যকেই ভারতের আবহাওয়া দফতরের (আইএমডি) কাছে আটটি নামের প্রস্তাব পাঠায় সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হয়।
তিতলি নামটা রেখেছিল পাকিস্তান। আসলে সাধারণ নাগরিক ও আবহাওয়াবিদদের মধ্যে সংযোগস্থাপনের জন্যই সহজ নাম দেওয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের।
২০০৪ সাল থেকে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলিকে নাম দেওয়ার চল শুরু হয়েছে।