বিদ্যুৎগতির ইঞ্জিনবিহীন ট্রেন! হ্যাঁ শুনে অবাক হলেও এ বার এমনটাই ঘটল বাস্তবে। তাও আবার খোদ ভারতে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে এই ‘ট্রেন ১৮’ ভারতীয় রেলের এক নয়া পদক্ষেপ। এটি সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি, অর্থাত্ ট্রেনের যাবতীয় প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি— সবই ভারতীয়।
২৯ অক্টোবর, সোমবার এই বিশেষ ট্রেনটির পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো শুরু হল। চার দিন ট্রায়াল চলবে এই ট্রেনের। এর পর ট্রেনটির চূড়ান্ত পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য ফের তাকে তুলে দেওয়া হবে রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন (আরডিএসও)-র হাতে।
নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে এই ট্রেনের গতি কেমন? ব্যবস্থাপনাই বা কী কী থাকছে? বিশ্বমানের এই ইঞ্জিনহীন ট্রেন ইন্টারসিটি ভ্রমণের জন্য শহর ও শহরতলি এলাকায় চালানো হবে। এই ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। ধীরে ধীরে তা ঐতিহ্যবাহী শতাব্দী ও রাজধানী এক্সপ্রেসের বদলি হিসাবে কাজ করবে।
রেল সূত্রে খবর, এর দ্বিতীয় রেকের নির্মাণও ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রথম রেকটি তৈরিতে খরচ পড়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ)-তে এই রেক তৈরি হয়েছে। রেলের দাবি, এই ধরনের ট্রেন তৈরিতে বিদেশে যে পরিমাণ অর্থব্যয় হয়, তার প্রায় অর্ধেকেই এ দেশে এমন রেক তৈরি সম্ভব হয়েছে।
সম্পূর্ণ বাতানুকূল এই ট্রেনে দু’টি এগজিকিউটিভ ও ১৪টি নন এগজিকিউটিভ চেয়ার কার কোচ থাকছে। সব মিলিয়ে মোট ১৩৪ জন বসতে পারবেন। এই ট্রেনে ইঞ্জিন বদলের কোনও ঝঞ্ঝাটই থাকছে না। রয়েছে ট্রাকশন মোটর, যা কি না সব ক’টি চাকাকেই এক সঙ্গে সমান কার্যকর করে তুলবে। শুধু তাই-ই নয়, এক সঙ্গে সব রকম ব্রেক নিয়ন্ত্রণও করবে এই মোটর।
স্টেনলেস স্টিলে তৈরি এই ট্রেনের দু’পাশে একটানা জানালা আছে। বগিগুলিও অত্যাধুনিক মানের। ট্রেনের ভিতর যাত্রী সুবিধার্থে থাকছে ওয়াইফাই ও জিপিএস। রয়েছে ব্যাগ রাখার আলাদা উন্নত জায়গা। এই ট্রেনেও দু’দিকেই থাকছে ড্রাইভারের কেবিন। ট্রেনের প্রথম বগি থেকে শেষ বগি কামরার ভিতর দিয়েই হেঁটে যাওয়া যাবে। আছে সিসিটিভি।
শুধু স্বয়ংক্রিয় দরজাই নয়, ট্রেনে থাকছে স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ির ব্যস্থাও। ট্রেনের নীচে পাওয়ার ট্রান্সমিটারের ব্যবস্থা আছে। এর প্রভাবে প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়ালেই বেড়িয়ে আসবে সেই সিঁড়ি। যাত্রী ওঠা-নামার পর আবার তা নিজের জায়গায় ফিরে গেলে তবেই ট্রেন ছাড়বে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য কামরার ভিতরে অত্যাধুনিক সুবিধার চেয়ারের ব্যবস্থাও রয়েছে এই ট্রেনে। বায়ো ভ্যাকিউম টয়লেট, এলইডি লাইট, রাবার ফ্লোরিং— সব মিলিয়ে এই ট্রেন যেমন সুন্দর, তেমনই আরামদায়ক। তবে এই ট্রেনের টিকিট কত হবে, বা কোন কোন শহরের মধ্যে এই ট্রেন যাতায়াত করবে সে সব তথ্য চূড়ান্ত ট্রায়ালের পরেই ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছে রেল।