পৌষ সংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি মূলত কৃষিপ্রধান উৎসব যা ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পালিত হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, তার মেয়াদও আলাদা হয়ে থাকে, কোথাও কোথাও চার দিন ধরে এই উৎসব চলে। মকর সংক্রান্তি নিয়ে রয়েছে নানা মিথ, সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে ভারতের বাইরেও হয় উৎসব।
বাংলায় এই উৎসবকে বলা হয় পৌষ সংক্রান্তি। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় ও ওডিশার একাংশে হয় টুসু উৎসব। এ সময় অনুষ্ঠিত গঙ্গাসাগর মেলা আর কেঁদুলির জয়দেবের মেলাও বেশ বিখ্যাত। ইলাহাবাদের অর্ধ কুম্ভমেলায় সমবেত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। লক্ষ্মীর আরাধনাও করা হয়।
বাংলায় যেমন পাটিসাপটা পুলি পিঠে, তেমন তামিলনাড়ুতে এই সময়ে পোঙ্গল উৎসবে হয় আখ ও তিলের মিষ্টি। পঞ্জাবের লোহ্রির মতোই তামিলরা প্রথম দিনে কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বালান এবং সেই আগুনে পুরনো পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র আহুতি দেন।
নেপালে এই উৎসব পরিচিত মাঘি নামে, তাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি-মা-লাও, মায়ানমারে থিং-ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান।
গুজরাতে উত্তরায়ণ, অসমে ভোগালি বিহু, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও জম্মুতে লোহ্রি, কর্নাটকে মকর সংক্রমণ, কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত নামে পরিচিত এই উৎসব।
উত্তর ভারতের অন্যান্য এলাকা, ওডিশা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা এবং কেরলে মকর সংক্রান্তি নামটিই প্রচলিত হলেও স্থানীয় নামেরও প্রচলন আছে, যেমন মধ্যপ্রদেশে সকরত বা বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের কোনও এলাকায় খিচড়ি পর্ব বা সকরতও বলে।
মণিপুরে অনেকে তাঁদের ঈশ্বর লিনিং-থোউয়ের কাছে প্রার্থনা করেন, অরুণাচল প্রদেশে চিন সীমান্তের কাছে ব্রহ্মকুণ্ডে রামায়ণ, মহাভারত ও কালিকাপুরাণের সূত্র ধরে দেবতার আরাধনা করা হয় এই সংক্রান্তিতে।
পুরাণেও এর উল্লেখ আছে। মকর সংক্রান্তিতেই নাকি মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেন।
পুরাণ বলছে, এ দিনেই দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যুদ্ধ শেষ হয়।বিষ্ণু অসুরদের বধ করে তাদের ছিন্ন মাথা মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দিয়েছিলেন, তাই এ দিন অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
কারও মতে, সূর্য এ দিন নিজের ছেলেকে নিয়ে মকর রাশির অধিপতি শনির বাড়ি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। তাই এ দিনটিকে বাবা ছেলের সম্পর্কের একটি বিশেষ দিন হিসেবেও ধরা হয়।
বিজ্ঞান বলছে, সূর্যের গতি দুই প্রকার, উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ণ। ২১ ডিসেম্বর সূর্য উত্তরায়ণ থেকে দক্ষিণায়নে প্রবেশ করে। এ দিন রাত সবথেকে বড় আর দিন সবথেকে ছোট হয়। এর পর থেকে দিন বড় আর রাত ছোট হতে শুরু করে। মাঘ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত ছয় মাস উত্তরায়ণ। আবার শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত ছয় মাস দক্ষিণায়ণ।