৫৫ বছর বয়সে মা হয়েছেন রাজস্থানের এক মহিলা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম (এআই প্রণীত)।
বয়স ৫৫। রাজস্থানের উদয়পুর জেলার লীলাবাস গ্রামের বাসিন্দা রেখা দেবী ঠাকুরমা এবং দিদিমা দুই-ই হয়েছেন। নাতি-নাতনিরা ঠাকুরমা বলে অজ্ঞান। কিন্তু দিনকয়েক ঠাকুরমার কাছে ঘেঁষতে পারেনি তারা। কারণ, আবার মা হয়েছেন ঠাকুরমা। এই নিয়ে সপ্তদশ বার।
রেখা যে বয়সে মা হয়েছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমন উদাহরণ বিস্তর আছে। কিন্তু তার পরেও বিস্মিত হয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। প্রথমে পেটের ব্যথা বলে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন রেখা। পরীক্ষার পরে ডাক্তার যখন বললেন, তিনি সন্তানসম্ভবা, তখন খানিক লজ্জা পেয়েছিলেন রেখা। তবে লজ্জায় চিকিৎসকে মিথ্যাও বলেন। জানান, এই নিয়ে চতুর্থ বার মা হচ্ছেন। রেখা সন্তান প্রসবের পরে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা জানতে পেরেছেন আগে ১৬ বার সন্তান প্রসব করেছেন প্রৌঢ়া।
প্রায় চার দশক আগে বিয়ে হয়েছে রেখার। স্বামী কাভরা রাম কলবেলিয়া ছোটখাটো কাজ করেন। পরিবার সূত্রে খবর, রেখার চার ছেলে এবং এক মেয়ে জন্মের কিছু দিনের মধ্যে মারা যায়। এখন ১২ সন্তানের মা তিনি। সাত ছেলে এবং পাঁচ মেয়ে। তাঁদের কয়েক জনের বিয়েও হয়ে গিয়েছে। রেখার গর্বিত স্বামীর কথায়, ‘‘আমরা তিন প্রজন্ম এক ছাদের তলায় থাকি। আমাদের দুই ছেলে এবং তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাদের প্রত্যেকের দু’টি-তিনটি করে ছেলেমেয়ে।’’
সপ্তদশ বার বাবা হয়ে কেমন লাগছে? প্রৌঢ়ের জবাব, ‘‘খুবই ভাল। তবে বাড়িতে ক’দিন ভিড় বেড়ে গিয়েছে খুব।’’ হবে না-ই বা কেন? ৬৬ বছর বছর বয়সে রেখা আবার মা হয়েছেন শুনে প্রতিদিন তাঁকে এবং নবজাতককে দেখতে বাড়ি আসছেন আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব থেকে প্রতিবেশীরা। মা-সন্তানকে দেখে সকলেই খুব খুশি। তবে মজাও করছেন। এতেই বিরক্ত রেখার স্বামী। কাভরা বলছেন, তিনি বা তাঁর সন্তানদের কেউ কোনও দিন স্কুলে যাননি। বাড়িতে অভাব আছে। তবে চলে যায়।
অন্য দিকে, রেখার চিকিৎসা করেছেন যিনি, ঝাডল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেই চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এই অপারেশন তাঁর জীবনের অন্যতম কঠিন অপারেশন ছিল। কারণ, মায়ের স্বাস্থ্যের হাল মোটেই ভাল ছিল না। বয়সজনিত সমস্যাও তো আছেই। তিনি বলেন, ‘‘রেখা দেবীকে ভর্তি করানো হয়েছিল গত ২৪ অগস্ট। প্রচণ্ড রক্তপাত হচ্ছিল। ভগবানকে অশেষ ধন্যবাদ যে মা-সন্তান, দু’জনেই এখন ভাল আছে।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের এটাই সমস্যা। আসলে শিক্ষার অভাব। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই নিরক্ষর। স্বাস্থ্যকর্মীরা চেষ্টা করছি। এই বয়সে মা হওয়া যে কতটা ঝুঁকির, তা বোঝানোর কাজ করতে হবে।’’