PM Modi in China

ঠারেঠোরে ট্রাম্পকে নিশানায় রেখে মৈত্রীর সুর ভারত-চিনের গলায়, সঙ্গী রাশিয়াও! ত্রিদেশীয় অক্ষ তৈরির সম্ভাবনা কতটা

রবিবার চিন পৌঁছেই ট্রাম্পের শুল্কনীতির সমালোচনা করেন পুতিন। ব্রিক্‌স গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির উপর আমেরিকার শুল্ক আরোপ করলে তা ‘বৈষম্যমূলক’ হবে বলে দাবি করেন তিনি। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাশিয়া-চিন যৌথ ভাবে লড়াই করবে বলেও জানান রুশ প্রেসিডেন্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ১৯:৩৩
Share:

(বাঁ দিক থেকে) নরেন্দ্র মোদী, ডোনাল্ড ট্রাম্প, শি জিনপিং এবং ভ্লাদিমির পুতিন। — ফাইল চিত্র।

একে একে দুই, দুইয়ে একে তিন!

Advertisement

উপলক্ষ সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বার্ষিক বৈঠক। আর সেই বৈঠকে যোগ দিতে চিনের তিয়ানজিন শহরে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৈঠকে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছেন এসসিও ব্লকের অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিরাও। তবে গোটা বিশ্বের নজর মোদী, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং পুতিনের দিকেই। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের আবহে এই তিন রাষ্ট্রপ্রধানের একত্রিত হওয়া নিছক একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য, এমনটা মনে করছেন না অনেকেই। বরং মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের শুল্কবাণ প্রতিহত করতে আরও কাছাকাছি আসছে তিন দেশ।

রবিবার চিন পৌঁছেই ট্রাম্পের শুল্কনীতির সমালোচনা করেন পুতিন। ব্রিক্‌স গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির উপর আমেরিকার শুল্ক আরোপ করলে তা ‘বৈষম্যমূলক’ হবে বলে দাবি করেন তিনি। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাশিয়া-চিন যৌথ ভাবে লড়াই করবে বলেও জানান রুশ প্রেসিডেন্ট। প্রসঙ্গত, এই ব্রিক্‌স গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য ভারতও। সম্প্রতি এই গোষ্ঠীকে আমেরিকার স্বার্থবিরোধী বলে দাবি করে সদস্য দেশগুলির উপর শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। সেই আবহে পুতিনের এই মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

অন্য দিকে, রবিবার চিনের তিয়ানজিন শহরেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন জিনপিং-মোদী। বৈঠক চলে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে। শেষ বার গত অক্টোবর মাসে রাশিয়ার কাজ়ানে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। তার পর দুই দেশের সম্পর্কে শৈত্য কাটার ইঙ্গিত মিলেছিল। শেষ বারের সাক্ষাতের প্রসঙ্গ টেনে জিনপিঙের সঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘গত বছর কাজ়ানে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছিল। তাতে আমাদের সম্পর্ক ইতিবাচক একটা দিশা পেয়েছিল। সীমান্তে বিরোধের পরবর্তী সময়ে ভারত এবং চিনের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা আবার শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবাও চালু হয়েছে।’’ এর পরেই চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আমাদের পারস্পরিক সংহতির উপর ভারত এবং চিনের ২০৮ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। এতে সারা পৃথিবীর কল্যাণ হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমরা এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী।”

মোদীকে স্বাগত জানিয়ে জিনপিংও পারস্পরিক সমন্বয়ের বার্তা দেন। বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, আপনার সঙ্গে আবার দেখা হল, ভাল লাগছে। এসসিও সম্মেলনের জন্য চিনে আপনাকে স্বাগত। গত বছর কাজ়ানে আমাদের বৈঠক সফল হয়েছিল। এই পৃথিবী একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে। চিন এবং ভারত সবচেয়ে সভ্য দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। আমরা বিশ্বের দু’টি সবচেয়ে জনবহুল দেশ। আমাদের বন্ধুত্ব, প্রতিবেশী হিসাবে একে অপরের পাশে থাকা জরুরি। ড্রাগন এবং হাতির একজোট হওয়া দরকার।’’

ঠান্ডা যুদ্ধের সময় থেকেই ভারতের বিশ্বস্ত বন্ধু সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন, আজকের রাশিয়া। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় আমেরিকা এবং পশ্চিমি দুনিয়া মস্কোর উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ভারসাম্যের নীতি বজায় রাখতে পেরেছিল নয়াদিল্লি। আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখেও সেই সময় রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রেখেছিল ভারত। ট্রাম্প আসার পর অবশ্য পরিস্থিতি বদলে যায়। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মরিয়া ট্রাম্প রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে পুতিনের দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা দেশগুলির উপর শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দেন। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার জন্য ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কের উপর আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা (অর্থাৎ মোট ৫০ শতাংশ) আরোপ করার কথা ঘোষণা করেন। চিন ভারতের তুলনায় রাশিয়া থেকে বেশি পরিমাণ তেল আমদানি করলেও বেজিঙের উপর অবশ্য এখনও শাস্তির খাঁড়া নামাননি ট্রাম্প। চিন থেকে দুষ্প্রাপ্য খনিজের জোগান নিশ্চিত করতেই ট্রাম্পের এই ‘কৌশল’ বলে মনে করা হচ্ছে।

অথচ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের ‘আগ্রাসন’ রুখতে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই আমেরিকার কৌশলগত বোঝাপড়া রয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেজিঙের ‘প্রভাব’ যথাসম্ভব কম রাখতে একযোগে কাজ করে ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অষ্ট্রেলিয়ার চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন এই বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চিনকে শুল্কে ছাড় দিয়ে, কৌশলগত ‘মিত্র’ ভারতকে কেন নিশানা করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠছিলই। এ বার আরও স্পষ্ট করে সেই প্রশ্নই তুলছেন আমেরিকার বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যেরা।

ট্রাম্প আপাতত ছাড় দিলেও আমেরিকার ‘দাদাগিরি’ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে চিন। বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি আর বেজিঙের পাশাপাশি আসা প্রয়োজন বলে বার্তা দিয়েছে জিনপিং প্রশাসন। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে সাবধান করে গত মার্চ মাসেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিয়েছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট। ঘটনাচক্রে, তারও দু’মাস পরে জুন থেকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ‘সহজ’ হতে থাকে। ভারতে আসেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। অন্য দিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই আপাতত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে ভারত। রাশিয়াও কার্যত ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়েছে, কোন দেশ কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে, তা অন্য কেউ স্থির করতে পারে না। ভারত-চিনের কাছাকাছি আসার আবহেই শনিবার ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছিলেন, “চিরস্থায়ী বন্ধু বা চিরস্থায়ী শত্রু বলে কিছু হয় না।”

সব মিলিয়ে রাশিয়া, চিন এবং নয়াদিল্লির কাছাকাছি আসা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তো বটেই, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নয়া অক্ষ তৈরি করতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আর এ ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করছেন ট্রাম্প।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement