সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা নির্বাচন কমিশনের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সুপ্রিম কোর্ট গোটা দেশে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পরিমার্জন (এসআইআর)-এর নির্দেশ দিলে, তা নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপের শামিল হবে। শীর্ষ আদালতে সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, সম্প্রতি শীর্ষ আদালতে একটি হলফনামা জমা দিয়েছে কমিশন। সেখানে তাদের দাবি, পরিমার্জনের নীতির ক্ষেত্রে অন্য যে কোনও কর্তৃপক্ষকে বাদ দিয়েই বিষয়টি তারা বিবেচনা করতে পারে।
এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র বিহারেই এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। তবে বিহারের পরে অন্য রাজ্যগুলিতেও এসআইআর-এর কাজ শুরু করে দিতে চায় তারা। হলফনামায় কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকা তৈরি এবং সংশোধনের কাজের তত্ত্বাবধানের জন্য সাংবিধানিক এবং আইনি ক্ষমতা রয়েছে তাদের হাতে। তাদের বক্তব্য, “গোটা দেশে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এসআইআর করার বিষয়ে যে কোনও নির্দেশ দেওয়ার অর্থ নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করা।”
বিহারে নির্বাচন কমিশনের এআইআর নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা চলছে। এ অবস্থায় গোটা দেশে নির্দিষ্ট সময় অন্তর, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এসআইআর করানোর জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন অশ্বিনীকুমার উপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী। এ বিষয়ে কমিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান তিনি। ওই আর্জির প্রেক্ষিতেই হলফনামা দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানায় কমিশন।
গত বুধবার দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতরে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে নিয়ে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। অপর নির্বাচন কমিশনারেরা এবং নির্বাচন কমিশনের অন্য আধিকারিকেরাও ছিলেন বুধবারের বৈঠকে। ওই বৈঠকের পরেই কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামী মাস অর্থাৎ, অক্টোবর থেকেই দেশ জুড়ে এসআইআর শুরু করে দিতে পারে কমিশন। এর আগে ২০০৩ সালে বিহারে শেষ এসআইআর হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে শেষ এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে।
সম্প্রতি বিহারে এসআইআর-এর কাজ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। এসআইআর চলাকালীন কমিশনের খসড়া তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছিল। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টেও। বস্তুত, কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল এসআইআর প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি পরিচয়ের প্রামাণ্য নথি হিসাবে আধার কার্ডকে গণ্য করা হবে না। তবে গত ৮ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, ব্যক্তিপরিচয়ের প্রামাণ্য নথি হিসাবে আধার কার্ড ব্যবহার করা যাবে। তবে এই নিয়ম আপাতত শুধু বিহারের জন্যই। শীর্ষ আদালত এ-ও উল্লেখ করেছে, আধার কার্ড কখনওই নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।
বিহারে কমিশনের এসআইআর-এর কাজ নিয়ে তৃণমূলনেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার প্রশ্ন তুলেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। আধার কার্ডকে কেন এসআইআর-এর জন্য কমিশন বিবেচনা করছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। বাস্তব পরিস্থিতির কথা বোঝাতে গিয়ে মমতা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ৫০ বছর আগে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের জন্মের শংসাপত্র পাওয়া যাবে কী করে? ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ‘এনআরসি’ হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আধার কার্ডও এখন ‘আইডেন্টিটি’। রাজ্যবাসীকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘‘যাঁদের আধার কার্ড নেই, তাঁরা করিয়ে নেবেন।’’