শেষে কি না ‘পদ্মাবতের’ প্রতিবাদেও আসল-নকল নিয়ে হইচই!
প্রশ্ন হল, কারা ‘প্রকৃত’ রাজপুত করণী সেনা? সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ছবিটির বিরুদ্ধে আন্দোলন তুলে নেওয়ার কথা গত কাল যারা ঘোষণা করল, তারা? নাকি যারা আজ দাবি করল যে, কোনও আন্দোলন তোলা হচ্ছে না? ‘পদ্মাবতের’ মুক্তি আটকাতে গোড়া থেকেই অশান্তি চালিয়ে আসা রাজপুত নেতাদের এমন ভোলবদল নিয়ে চর্চা চলল দিনভর। অনেকে এ-ও বললেন, বিক্ষোভ নিয়ে করণী সেনার মধ্যেই যে ভাঙন ধরেছে, এই ঘটনাপ্রবাহ তার প্রমাণ।
‘পদ্মাবত’ রুখতে লাগাতার হুমকি-বেফাঁস মন্তব্য ছড়িয়ে এত দিন যে সংগঠনটির নেতারা মূলত খবরে থেকেছেন, সেটির নাম ‘শ্রী রাজপুত করণী সেনা’। এর সভাপতি লোকেন্দ্র সিংহ কালভি। এ ছাড়াও ‘শ্রী রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা’ নামে আলাদা একটি সংগঠন রয়েছে। সেটির সভাপতি সুখদেব সিংহ গোগামেদি। গত কাল এই ‘রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা’-র মু্ম্বই শাখার নেতা যোগেন্দ্র সিংহ কাতার দাবি করেন, সভাপতির নির্দেশে তাঁদের কয়েক জন ছবিটি দেখেছেন। ছবিতে সত্যিই রাজপুত মূল্যবোধকে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে কোনও বিতর্কিত দৃশ্য নেই। এই ছবি দেখে রাজপুতেরা গর্ববোধ করবেন। কাতার বিবৃতি দিয়ে জানান, করণী সেনার পক্ষ থেকে আন্দোলন তুলে নেওয়া হবে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতে ছবিটি দেখানোয় সাহায্যও করবে তারা।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই আজ সুর চড়ান কালভি। তিনি বলেন, ‘‘ভুয়ো করণী সেনারা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে। আমরাই আন্দোলনটা শুরু করেছিলাম। তা আমরাই চালিয়ে যাব। সারা দেশে প্রকৃত রাজপুত করণী সেনা একটাই রয়েছে। আমি তার সভাপতি। কিন্তু করণী সেনার নাম নিয়ে আরও অন্তত আটটি ভুয়ো সংগঠন মাথা তুলছে কায়েমি স্বার্থ নিয়ে। এদের থেকে সতর্ক থাকুন।’’ তবে ‘রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা’র সভাপতি গোগামেদি বলেছেন, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে এমন কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। আন্দোলন
চালিয়ে যাব। বিবৃতিতে যাঁদের নাম সই করা ছিল, প্রত্যেককে বহিষ্কার করা হয়েছে।’’
কালভি অবশ্য এখানেই থামেননি। তাঁর দাবি, রাজপুত আবেগকে অসম্মান করার জন্যই রাজস্থানের উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। করণী সেনাই বিজেপিকে ভুগতে বাধ্য করেছে।
গত বছর ১ ডিসেম্বর মুক্তির কথা ছিল ‘পদ্মাবতের’। করণী সেনার চাপে তা পিছিয়ে যায়। ছবির কয়েকটি দৃশ্য প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। রাজপুত করণী সেনা দাবি করে, সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির স্বপ্নে রানি পদ্মাবতীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখানো হয়েছে। একটি নাচের দৃশ্যে রানির কোমর দেখতে পাওয়া নিয়েও বিতর্ক বাধে। পরিচালক ভন্সালী প্রথম অভিযোগটি বরাবরই অস্বীকার করেছিলেন। এ-ও জানিয়েছিলেন, মালিক মহম্মদ জায়সীর কাব্যগ্রন্থ ‘পদ্মাবত’-এর অনুপ্রেরণায় ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তাতে বিতর্ক থেকে রেহাই মেলেনি। পরে নাম পাল্টে ‘পদ্মাবত’ প্রেক্ষাগৃহে আসে গত ২৫ জানুয়ারি। যদিও তিন রাজ্যে এখনও অদেখাই রয়েছে ছবিটি।
‘পদ্মাবতের’ নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন মনে করেন, এ ছবি নারীত্বেরই জয়। তাঁর কথায়, ‘‘দু’শো কোটি টাকা বাজেটের কোনও নারীকেন্দ্রিক ছবি এর আগে বলিউডে তৈরি হয়েছে কি? এ শুধু আমার সাফল্য নয়, সমস্ত অভিনেত্রীরও।’’