Amit Shah

সংসদে ‘মহাবিতর্কিত’ বিল পাশ করাতে বিজেপি ভরসা করছে ‘নীতিবোধসম্পন্ন’ বিরোধীদের উপর! ‘ভাঙা-গড়া’র ইঙ্গিত?

গত বুধবার লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই বিলে বলা হয়েছে, গুরুতর অপরাধের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিন থেকে তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৪৪
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে সংসদে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নিয়মানুযায়ী এই বিল পাশ করাতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারকে সংসদের দুই কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন জোগাড় করতে হবে। বিরোধীদের বক্তব্য, এই বিল পাশই হবে না। কারণ, সংসদের উভয় কক্ষে বিজেপির দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন নেই। প্রশ্ন হল, তা হলে বিজেপি এই বিল আনল কেন? বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, এসআইআর থেকে নজর ঘোরাতে এই বিল আনা হয়েছে। আবার অনেকের বক্তব্য, এই বিল পাশ করাতে বিরোধী সাংসদদের ভাঙিয়ে নেওয়ার পথে হাঁটবে বিজেপি। দ্বিতীয় জল্পনাটি আরও উস্কে দিয়েছে সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্য।

Advertisement

গুরুতর অপরাধের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও কেন্দ্রীয় বা রাজ্যের মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিনে তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন। এমনই প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলে। গত বুধবার বিরোধীদের হইচই-বিক্ষোভের মধ্যেই লোকসভায় এই বিল পেশ করেন শাহ। বিল পাশের প্রয়োজনীয় সংখ্যা প্রসঙ্গে সোমবার শাহ একটি সাক্ষাৎকারে ‘নীতিবোধসম্পন্ন’ বিরোধী সাংসদদের সমর্থনের আশা ব্যক্ত করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমি আশাবাদী, এটা (বিল) পাশ হবে। কংগ্রেস এবং বিরোধীদের মধ্যে বহু মানুষ আছেন, যাঁরা নৈতিকতাকে সমর্থন করেন এবং নীতিবোধ অনুসরণ করে চলেন।”

প্রসঙ্গত, ভাঙা-গড়ার খেলায় শাহকে অনেকে ‘চাণক্য’ আখ্যা দেন। তিনিই ভারতে ‘রিসর্ট রাজনীতি’র স্রষ্টা। রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় নতুন করে উঠে আসছে শাহের ‘নীতিবোধ’ এবং রাজনৈতিক কৌ‌শল। গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে যে ভাবে সরকার ভাঙা-গড়া হয়েছে, তার নেপথ্যে শাহের কৌশল জাতীয় রাজনীতিতে সর্বজনবিদিত। সেই সব ক্ষেত্রেই খাতায়-কলমের হিসাবকে ‘ভুল’ প্রমাণ করে নতুন অঙ্ক কষে দিয়েছিলেন শাহ। ভাঙা-গড়ার খেলায় মহারাষ্ট্রে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, নিজের হাতে তৈরি করা দলের নাম এবং ঘড়ি প্রতীক খোয়াতে হয়েছে প্রবীণ নেতা শরদ পওয়ারকে। মূল এনসিপি এবং ‘ঘড়ি’ প্রতীক এখন তাঁর ভাইপো অজিত পওয়ারের দখলে। যে অজিত আবার বিজেপির শরিক। প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের তৈরি করা দল শিবসেনার মূল নাম এবং ‘তির-ধনুক’ প্রতীক পাননি তাঁর পুত্র উদ্ধব ঠাকরে। তির-ধনুকের দখল এখন একনাথ শিন্ডের কাছে। সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করানোর প্রশ্নে শাহ যে ভাবে ‘নীতিবোধসম্পন্ন’ বিরোধী সাংসদদের সমর্থনের প্রত্যাশার কথা বলেছেন, তাতে অনেকেই মনে করছেন, তিনি হিসাব না-কষেই ওই মন্তব্য করেননি।

Advertisement

মতাদর্শগত ভাবে একদা বিজেপির কট্টর সমালোচক শশী তারুরের মতো কংগ্রেস সাংসদ গত কয়েক মাস ধরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্তুতি গাইতে শুরু করেছেন। এমন ‘শশী’ কি আরও আছেন? যদিও বিরোধীরা এখনও মনে করছে না, সহজে ভাঙা-গড়া সম্ভব হবে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘বিজেপি চাইছে এই বিল এনে পিছনের দরজা দিয়ে বিরোধী দলগুলির হাতে থাকা রাজ্যগুলিকে দখল করতে। কিন্তু ওরা তা পারবে না।’’ বঙ্গের শাসকদল তৃণমূলও দাবি করছে, সংখ্যার নিরিখে এই বিল পাশ করাতে পারবে না বিজেপি। কিন্তু কৌতূহলীদের প্রশ্ন, বিজেপি জানে তাদের হাতে সংখ্যা নেই। তার পরেও তারা বিল আনল কেন?

অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল টিডিপি, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল-সহ এনডিএ-র সব শরিক এই বিলকে সমর্থন করেছে বলে দাবি করেছেন শাহ। তাঁর কথায়, “সবাই সহমত বলে জানিয়েছে। তবে সংসদে বিতর্ক না হওয়ায় শরিকেরা সমর্থন জানানোর সুযোগ পায়নি। যৌথ সংসদীয় কমিটি তাদের প্রস্তাব জানানোর পর সংসদে এই বিষয়ে বিতর্ক হবে। তখন সব দল তাদের মতামত জানাবে।” প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিলটি পেশ করার পরেই তা যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর কথা জানান শাহ। সংসদের দুই কক্ষের শাসক এবং বিরোধী সাংসদেরা ওই কমিটিতে থাকবেন। তৃণমূল অবশ্য যৌথ সংসদীয় কমিটিতে প্রতিনিধি পাঠাবে না বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে।

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ধনখড়

জগদীপ ধনখড় হঠাৎই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় মধ্য মেয়াদে সেই পদের জন্য নির্বাচন হতে চলেছে। শাসক জোট এনডিএ প্রার্থী করেছে সিপি রাধাকৃষ্ণনকে। উল্টোদিকে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুদর্শন রেড্ডি। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি থাকাকালীন রেড্ডির একটি রায়ের জন্য দেশে মাওবাদ এখনও টিকে রয়েছে বলে সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন শাহ। পাশাপাশি, উপরাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ মনোনীত প্রার্থী রাধাকৃষ্ণনের প্রশংসা করে বলেন, “তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা প্রচুর। তিনি দু’বারের সাংসদ। চারটি রাজ্যের রাজ্যপাল হয়েছেন।” আগামী বছর তামিলনাড়ুর বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই সে রাজ্যের রাধাকৃষ্ণনকে প্রার্থী করা হল কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে শাহ বলেন, “না, এমন কোনও ব্যাপার নেই। দেশের পূর্ব দিক থেকে এক জন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। উত্তর এবং পশ্চিম দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী। খুব স্বাভাবিক যে, উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দক্ষিণের কেউ হবেন।” ধনখড়ের ইস্তফা নিয়ে জলঘোলা না-করার আর্জিও জানান শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘তিনি (ধনখড়) সংবিধান অনুযায়ী দারুণ কাজ করেছেন। স্বাস্থ্যের কারণে পদত্যাগ করেছেন। এই বিষয়ে অতিরিক্ত নাড়াঘাঁটা করে কিছু খুঁজতে না যাওয়াই উচিত। ধনখড় সাহেবের ইস্তফাপত্রে সব বলা আছে। উনি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণ জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন।”

সংসদের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনী

সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া বাদল অধিবেশনে বিক্ষোভ দেখাতে ওয়েলে নেমে এলে সিআইএসএফ আধিকারিকেরা তাঁদের বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। সেই প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরেই সিআইএসএফ থেকে কয়েক জনকে নিয়ে একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। লোকসভার স্পিকারের অনুমতিসাপেক্ষে যাদের মোতায়েন করা যায়। শাহ বলেন, “কিছু বামপন্থী সংসদের ভিতর স্প্রে করেছিলেন। তখনই এই পরিবর্তন করা হয়েছিল। সংসদের ভিতর যে কোনও বাহিনীই স্পিকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।” বিরোধীরা এই বিষয়ে মিথ্যা দাবি করে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে বলেও দাবি করেন শাহ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement