Bill for Removal of Jailed Ministers

বিজেপির বিরোধিতায় সবচেয়ে এগিয়ে তৃণমূলই, বিতর্কিত শাহি বিলকে ‘হাতিয়ার’ করে বার্তা দিলেন অভিষেক

বুধবার লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেছেন শাহ। তার সমালোচনা করতে বসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝালেন, বিজেপির বিরোধিতায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে তৃণমূলই। অন্য কোনও দল নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ১৯:৩৪
Share:

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিল নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

বিজেপির বিরোধিতায় দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলির চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলার তৃণমূলই। ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এমন বার্তাই দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বোঝাতে চাইলেন, প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে তৃণমূল। অভিষেকের বক্তব্য, বুধবার মূলত তৃণমূল সাংসদদের প্রতিবাদেই এই বিল পেশের সময় সমস্যায় পড়তে হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তৃণমূলের বিক্ষোভের কারণেই বাধ্য হন নিজের আসন ছে়ড়ে চতুর্থ সারিতে গিয়ে বসতে এবং সেখান থেকে নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত হয়ে বিল পেশ করতে। অন্তত ২০ জন মার্শাল বিল পেশের সময় শাহকে ঘিরে ছিলেন বলে দাবি অভিষেকের। আগামী বছরেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে অভিষেকের এই বক্তব্য বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যে থেকেও দল হিসাবে তৃণমূলের গুরুত্বকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

Advertisement

বুধবার লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেছেন শাহ। তাতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী-সহ কেন্দ্র বা রাজ্যের যে কোনও মন্ত্রী যদি গুরুতর অপরাধের অভিযোগে টানা ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিন থেকে তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন। পাঁচ বছর বা তার বেশি জেল হতে পারে, এমন অপরাধগুলিকে ‘গুরুতর’ হিসাবে ধরা হবে। এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের বিক্ষোভে লোকসভায় ব্যাপক হট্টগোল হয় এবং অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে হয়। অভিষেক জানান, মঙ্গলবার রাতে তাঁরা এই বিলের কথা জানতে পেরেছিলেন। তার পর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা হয়। তাঁর পরামর্শেই বুধবার এই বিল পেশের সময় একেবারে শুরু থেকে বিরোধিতা করেন উপস্থিত তৃণমূল সাংসদেরা। যখন বিলটির ভূমিকা দেওয়া হচ্ছিল, তখন থেকে তাঁরা সরব হন। বাকি বিরোধী সাংসদেরা ‘নোট অফ ডিসেন্ট রেকর্ড করা’র সুযোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রকে।

অভিষেক বলেন, ‘‘আমরা যে ভাবে শুরু থেকে ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ করেছি, এটা আর কেউ করেনি। আমাদের কারণেই লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করতে হল। নোট অফ ডিসেন্ট রেকর্ড করা মানে বিল প্রস্তাব করার সুযোগ দেওয়া। আমরা সেটাও দিইনি। আমাদের কারণে শাহকে চতুর্থ রো-তে নেমে ২০ জন মার্শাল নিয়ে বিল পেশ করতে হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, পরে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘সারা দেশ দেখল, অসাংবিধানিক সংশোধন বিল আনার জন্য শাহ নিজের আসনে বসার সাহস দেখাতে পারেননি। ২০ জন মার্শাল ওঁর নিরাপত্তায় ছিলেন। তবু ওঁকে চতুর্থ রো-তে যেতে হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, ‘ইন্ডিয়া’ জোটে মোট ২৮টি দল রয়েছে। লোকসভায় তারা ২৩৪টি আসন পেয়েছে। তার মধ্যে তৃণমূলের অবদান ২৯টি, যা কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির পরেই।

Advertisement

বাংলায় বিজেপি জিতেছে ১২টি লোকসভা আসনে। অভিষেক বুধবার সে প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, ‘‘যারা এত হম্বিতম্বি করে, তারা বাংলার ক্ষমতা দেখল। লোকসভা নির্বাচনের ফল যদি উল্টো হত, যদি তৃণমূল ১২টা আর বিজেপি ২৯টা আসন পেত, এই বিল আজ পাশ হয়ে যেত।’’ যদিও বিলটি কোনও দিন পাশ হবে না বলে মনে করেন অভিষেক। কারণ এটি সংবিধান সংশোধনী বিল। তা আইনে পরিণত করার জন্য সংসদের উভয়কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। অভিষেকের দাবি, এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনও দিন পাওয়া যাবে না। তা হলে কেন বিল পেশ? অভিষেক জানিয়েছেন, আসলে বিল যে পাশ করা যাবে না, তা বিজেপিও জানে। বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তারা ধাক্কা খেয়েছে। সে দিক থেকে নজর ঘোরাতেই এই বিল পেশ করা হল।

বিরোধীদের বক্তব্য, এই বিলের মাধ্যমে বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলিতে ইডি বা সিবিআইকে আরও বেশি করে কাজে লাগাতে চায় কেন্দ্র। দোষ প্রমাণিত না হলেও যে কোনও মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে এই বিল আইনে পরিণত হলে। অভিষেক বিলের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার মানুষের সমস্যা নিয়ে আদৌ চিন্তিত নয়। কী ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা যায়, তারা শুধু সেটা ভাবে। আসলে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করিয়ে সরকার ফেলে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই বিল পেশ করা হচ্ছে।’’ এই বিলের মাধ্যমে আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও মনে করেন অভিষেক। বলেন, ‘‘কেউ দোষী কি নির্দোষ, সেটা তো আদালত ঠিক করবে। বিজেপি সেটা ঠিক করার কে? আদালতের কাজে আপনারা কী ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন?’’ বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘২৪০ জন সাংসদ নিয়ে এই বিল পেশ করছেন, হাতে ৪০০ জন সাংসদ থাকলে তো দেশকে আপনারা পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত করে ফেলতেন। মানুষ তা হতে দেয়নি।’’

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অভিষেক। জানিয়েছেন, ৩০ দিন নয়। কোনও মন্ত্রীকে গ্রেফতারির পর ১৫ দিন সময় নিক তদন্তকারী সংস্থা। তার মধ্যে যদি ধৃতের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা না-যায়, তবে ওই তদন্তকারী অফিসার এবং সংস্থার প্রধানকে দ্বিগুণ জেল খাটতে হবে। যদি এমন বিল আনা হয়, তৃণমূল তা সমর্থন করবে। অভিষেক বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে ক’জন বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে? কেন্দ্রের দেওয়া পরিসংখ্যানই বলছে, ৫৮৯২টি মামলায় তদন্ত করেছে ইডি। মাত্র আটটি মামলায় দোষ প্রমাণ করতে পেরেছে। অর্থাৎ, ৯৯ শতাংশ মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বি়জেপি আসলে দেশটাকে বিরোধীশূন্য করতে চায়। হিমন্ত বিশ্বশর্মা, অজিত পওয়ার, শুভেন্দু অধিকারীরা রাতারাতি ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে গেলেন কী ভাবে? কাউকে গ্রেফতার করা হলে ১৫ দিনের মধ্যে দোষ প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ নিন, আমরা বিল সমর্থন করব।’’ উল্লেখ্য, আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পরেও অভিষেক সাত দিনের মধ্যে ধর্ষককে এনকাউন্টারে মারার আইনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছিলেন। তবে তা নিয়ে আর কথা এগোয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement