Bill for Removal of Jailed Ministers

কেজরী থেকে জয়ললিতা কিংবা সিসৌদিয়া, শাহের বিল অতীতে পাশ হলে কারা প্যাঁচে পড়তেন? তালিকায় পশ্চিমবঙ্গেরও এক

নতুন বিল অনুযায়ী, কোনও মন্ত্রী যদি গুরুতর অপরাধের অভিযোগে টানা ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিন থেকে তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন। এই বিল যদি অতীতে আইন হিসাবে কার্যকর হত?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ২১:২২
Share:

(বাঁ দিক থেকে) দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এবং দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যের মন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোনও মন্ত্রী যদি গুরুতর অপরাধের অভিযোগে টানা ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিন তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন। পাঁচ বছর বা তার বেশি জেল হতে পারে, এমন অপরাধগুলিকে ‘গুরুতর’ হিসাবে ধরা হবে।

Advertisement

বিল পেশের সময় বিরোধীরা তুমুল হট্টগোল করেন। তাঁদের বক্তব্য, এই বিলের মাধ্যমে ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে আরও সহজে ব্যবহার করবে বিজেপি। বিভিন্ন বিরোধীশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করিয়ে সরকার ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনাও এর মাধ্যমে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিরোধীদের শোরগোলে বুধবার লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে হয়েছে। একাংশের বক্তব্য, এই বিল আদৌ আইনে পরিণত হবে না। কারণ, এটি সংবিধান সংশোধনী বিল এবং এর জন্য সংসদের উভয়কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। যা কখনও পাওয়া যাবে না বলে বিরোধীদের একাংশ মনে করছে।

কিন্তু এই বিল যদি অতীতে আইন হিসাবে কার্যকর হত? কোন কোন মন্ত্রী বিপাকে পড়তেন? তালিকায় দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর জয়ললিতা, অনেকেই আছেন। এমনকি, তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের এক প্রাক্তন মন্ত্রীও।

Advertisement

অরবিন্দ কেজরীওয়াল

২০২৪ সালের ২১ মার্চ দিল্লির আবগারি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন কেজরীওয়াল। কিন্তু গ্রেফতারির পরেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেননি তিনি। কেজরীই দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি গ্রেফতার হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আপ প্রধান ঘোষণা করেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। জানান, পুনরায় ভোটে না জেতা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পদে ফিরবেন না। পরে অতিশী মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে আছেন বিজেপির রেখা গুপ্তা।

সত্যেন্দ্র জৈন

আর্থিক তছরুপের অভিযোগে দিল্লির আম আদমি পার্টির নেতা সত্যেন্দ্র জৈনকে ২০২২ সালের মে মাসে গ্রেফতার করেছিল ইডি। সে সময় তিনি দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন। গ্রেফতারির ন’মাস পরে ওই পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন।

জয়ারাম জয়ললিতা

তামিলনাড়ুর ছ’বারের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইস্তফা দিয়েছিলেন এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা। জেলেও গিয়েছিলেন। অবশ্য কর্নাটক হাই কোর্টের রায়ে ‘বেকসুর খালাস’ হয়ে জেল থেকে বেরিয়ে ২০১৫-য় আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ‘আম্মা’। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগেই ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক

পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছিল ইডি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৪ মাস পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে তার আগে ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, গ্রেফতারির সাড়ে তিন মাস পরে তাঁকে মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়াও মন্ত্রী থাকাকালীন গ্রেফতার করা হয়েছিল কয়েক জনকে, যাঁরা গ্রেফতারির পরে ইস্তফা দেন। কাউকে আবার মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে আছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রথম ২০২২ সালের ২৩ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। ২৮ জুলাই তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়েছিল। পার্থ ছিলেন শিল্পমন্ত্রীর পদে। ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন। পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে গিয়েছিলেন তিনি। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে গিয়েছিলেন স্ত্রী রাবড়ী দেবীকে। ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর ১২ বছরের পুরনো মামলায় অপহরণ এবং খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী শিবু সোরেন। ৫ ডিসেম্বর তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সময় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দাবিতে মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন শিবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement