Plane Crash in Ahmedabad

আপৎকালীন দরজার পাশেই ১১এ! ইকোনমি ক্লাসের এই আসনই কি রমেশকে বাঁচিয়ে দিল? কী কী ঘটে থাকতে পারে

অহমদাবাদের বিমান থেকে কি শেষ মুহূর্তে লাফিয়ে পড়েছিলেন? রমেশ সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। কী ভাবে তিনি বেঁচে গেলেন, বিশেষজ্ঞেরা কয়েকটি সম্ভাবনা খোঁজার চেষ্টা করেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫ ১৪:৫৮
Share:

বিমান ভেঙে পড়ার পর ঘটনাস্থল থেকে হেঁটে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠেছেন বিশ্বাসকুমার রমেশ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বোয়িং সংস্থার বিশালাকার ড্রিমলাইনার বিমান। বসতে পারেন ২৯০ থেকে ৩০০ জন যাত্রী। অহমদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর সেই বিমানই ভেঙে পড়েছে। পাইলট, বিমানকর্মী-সহ ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলেই। তবু এক জন বেঁচে গিয়েছেন। বিমান ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার পরেও, তাতে আগুন ধরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরেও এক জন বেঁচে গিয়েছেন। শুধু বাঁচেননি। ঘটনাস্থল থেকে ‘দৌড়ে’ পালিয়েছেন। হেঁটে হেঁটে উঠেছেন অ্যাম্বুল্যান্সে। যা দেখে অনেকেই বলছেন, ‘মিরাক্‌ল’ ছাড়া এটা সম্ভব নয়।

Advertisement

কী ভাবে বেঁচে গেলেন? নিজেও জানেন না ৪০ বছরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাসকুমার রমেশ। হাসপাতাল থেকে তিনি বলেছেন, ‘‘বিমান ওড়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ড পর একটা প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। তার পরেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। সব কিছু খুব দ্রুত হয়ে গিয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমি যখন উঠে দাঁড়াই, আমার চারপাশে শুধু লাশ আর লাশ। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। উঠেই আমি দৌড়োতে শুরু করি। আমার চারপাশে বিমানের অনেক টুকরো দেখতে পেয়েছিলাম। তার পর কেউ এক জন আমাকে টেনে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলল। আমি হাসপাতালে চলে এলাম।’’ শুক্রবার সকালে রমেশ অহমদাবাদ সিভিল হাসপাতালের ডাক্তারদের জানিয়েছেন, তাঁর আসনটি খুলে বেরিয়ে এসেছিল। সেই কারণে হয়তো তিনি বাঁচতে পেরেছেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রমেশ বলেন, ‘‘গোটা বিমান ভেঙে পড়ল। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনিতে আমার সিটটা খুলে এসেছিল। তাই হয়তো আমি বেঁচে গেলাম।’’ সংবাদমাধ্যমকে রমেশ বলেছেন, ‘‘আমি যে দিকে পড়েছিলাম, সেখানে হস্টেলের একতলার ফাঁকা জায়গা ছিল কিছুটা। সেখান দিয়ে আমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু উল্টোদিকে হস্টেলের দেওয়াল ছিল। সে দিক থেকে হয়তো কেউ বেরোতে পারেনি। আমার বাঁ হাত একটু পুড়ে গিয়েছে।’’

বিমান থেকে কি শেষ মুহূর্তে লাফিয়ে পড়েছিলেন? রমেশ সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। বয়ান শুনে মনে হচ্ছে, তিনি কিছু ক্ষণের জন্য জ্ঞান হারিয়েছিলেন। কী ভাবে তিনি বেঁচে গেলেন, বিশেষজ্ঞেরা কয়েকটি সম্ভাবনা খোঁজার চেষ্টা করেছেন। প্রায় সকলেই একটি বিষয়ে একমত— রমেশের আসনই তাঁর অন্যতম ‘রক্ষাকর্তা’। এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমানের ইকোনমি ক্লাসের ১১এ নম্বর আসনে বসেছিলেন রমেশ। বিমানের একেবারে বাঁ দিকের সারিতে আপৎকালীন দরজার পাশেই রয়েছে এই আসন।

Advertisement

ড্রিমলাইনার বিমানের গঠন অনুযায়ী, সামনের দিকে তিনটি সারির আসন বিজ়নেস ক্লাসের অন্তর্গত। এর পর মাঝে কিছুটা অংশ ফাঁকা রেখে ১১ নম্বর সারি শুরু। ইকোনমি ক্লাসের আসনগুলি রয়েছে ১১ থেকে ৩১ নম্বর সারিতে। এই ১১ নম্বর সারির প্রথম আসনটিই ছিল রমেশের ১১এ। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিমান ওড়ার পর আপৎকালীন দরজা স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাঝ-আকাশে যাতে ওই দরজা খুলে না যায়, সেই ব্যবস্থা থাকে। কী ভাবে কোন পরিস্থিতিতে ওই দরজা ব্যবহার করতে হয়, যাত্রীদের তা বুঝিয়ে দেন বিমানকর্মীরা। এ ক্ষেত্রে রমেশের সেই ‘প্রশিক্ষণ’ কাজে লেগেছিল। বিমান সামনের বিল্ডিংয়ে ধাক্কা খাওয়ার পর আপৎকালীন দরজার ‘সিস্টেমে’ গোলমাল হয়ে যায় বলে মনে করা হচ্ছে। যে দরজা খোলার কথা ছিল না, সেটি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এই সময়ে হয় রমেশ নিজে দরজায় ধাক্কা মেরেছিলেন, অথবা দরজাটি দুর্ঘটনার অভিঘাতে নিজে থেকেই ছিটকে গিয়েছিল। সেখান থেকে রমেশ নীচে পড়ে যান। বিমান বিস্ফোরণের ঠিক আগের মুহূর্তে ১১এ আসন থেকে ছিটকে বেরোতে পেরেছিলেন তিনি। তা না হলে তাঁর বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত রমেশ ২০০৩ সাল থেকে ব্রিটেনে থাকেন। সেখানকার নাগরিকত্বও পেয়েছেন। তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানেরা ব্রিটেনে রয়েছেন। রমেশ ভারতে এসেছিলেন আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর সঙ্গে বৃহস্পতিবার লন্ডনে ফিরছিলেন তাঁর ভাইও। তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। রমেশ জানিয়েছেন, বিমানের অন্য দিকের আসনে জায়গা পেয়েছিলেন তাঁর ভাই। অহমদাবাদের দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। যেখানে বিমানটি ধাক্কা খেয়েছিল, সেটি ডাক্তারদের একটি হস্টেল। বসত এলাকায় দুর্ঘটনার ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিমানের বহু দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। তা শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ওই বিমানে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫২ জন ব্রিটিশ, সাত জন পর্তুগিজ এবং এক জন কানাডিয়ান নাগরিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement