Sudden Death in Adults

অকালে মৃত্যু বাড়ছে? দায়ী কি কোভিড টিকা? গবেষণায় কেন্দ্র, আইসিএমআর এবং এমসের যৌথ রিপোর্টে কী কী উঠে এল

অতিমারি কালে গায়ক কেকে, অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লা এবং সম্প্রতি অভিনেত্রী শেফালী জরীওয়ালার মৃত্যুতে কোভিড টিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। সেই আবহেই প্রকাশ্যে এল কেন্দ্রের রিপোর্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ১৪:০৩
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েক জন খ্যাতনামীর আকস্মিক মৃত্যুতে প্রশ্নটা উঠেছিল। প্রশ্নটা হল— অতিমারি-পরবর্তী সময়ে প্রাপ্তবয়স্কদের অকালমৃত্যুর সঙ্গে কি কোনও ভাবে কোভিড টিকার যোগ রয়েছে? সম্প্রতি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও আবার সেই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন। সেই আবহে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল (আইসিএমআর) এবং এমস যৌথ রিপোর্ট দিয়ে জানিয়ে দিল, করোনার টিকা নেওয়ার সঙ্গে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোনও যোগ নেই।

Advertisement

গত এক মাসে কর্নাটকের হাসন জেলায় অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে হৃদ‌্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে। তা নিয়ে সিদ্দারামাইয়া দাবি করেছিলেন, অতিমারি কালে কোভিড টিকা নিয়ে বড্ড তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল। যুবক-যুবতীদের অকালমৃত্যুর সঙ্গে এর যোগ থাকতেই পারে। এর পরেই করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণার জন্য কমিটি তৈরির কথা ঘোষণা করেন সিদ্দারামাইয়া। অতিমারি কালের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে খবরে দেখা গিয়েছে, কোভিডের টিকা নিয়েছেন, এমন অনেকেই আচমকা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, যাঁদের অনেকেই কমবয়সি। করোনার টিকা নেওয়ার কারণে তাঁরা মারা যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহলে। গায়ক কেকে, অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লা এবং সম্প্রতি অভিনেত্রী শেফালী জরীওয়ালার মৃত্যুতেও কোভিড টিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের অকালে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে, এ রকম কোনও তথ্য বা পরিসংখ্যান নেই।

এই বিতর্কের আবহে বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আকস্মিক এবং অকালমৃত্যুর সঙ্গে কোভিড টিকার যোগ নিয়ে যে দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুল এবং বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গেও সাযুজ্যপূর্ণ নয়।

Advertisement

কেন্দ্র জানিয়েছে, ১৮-৪৫ বছর বয়সিদের যাঁদের অকালে মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের কেন এমন পরিস্থিতি হল, তা নিয়ে কাজ করেছে আইসিএমআর এবং ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল’ (এনসিডিসি)। ২০২৩ সালের মে থেকে অগস্ট মাসের মধ্যে দেশের ১৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪৭টি হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। যাঁরা শারীরিক ভাবে সুস্থই ছিলেন, কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে হঠাৎ মারা গিয়েছে, মূলত তাঁদের রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই গবেষণা চালানো হয়েছিল। পরে আইসিএমআর এবং এমসও একই বিষয় নিয়ে একটি গবেষণা চালায়। দুই গবেষণার রিপোর্টেই দেখা গিয়েছে, করোনা টিকার সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের আকস্মিক মৃত্যুর কোনও যোগ নেই।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে নানা তথ্য নেওয়া হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, টিকা নেওয়া বা টিকা না-নেওয়া, দু’ধরনের রোগীরই মৃত্যুর কারণ— দুর্বল হৃৎপিণ্ড, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, ধমনীতে রক্ত চলাচলে সমস্যার কারণে হৃৎপিণ্ডে যথেষ্ট রক্ত না-পৌঁছোনো, হৃৎপিণ্ডে পেশির দুর্বলতার কারণে সারা শরীরে রক্ত পৌঁছোতে না-পারা।

রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে, যাঁদের হৃৎপিণ্ডে এ ধরনের সমস্যা ছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান, বিশেষ করে সারা রাত জেগে অত্যধিক মদ্যপান আচমকা মৃত্যুর কারণ হিসাবে উঠে এসেছে। তেমনি দুর্বল হৃৎপিণ্ড যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে অজান্তেই অতিরিক্ত ব্যায়াম, নাচ, মানসিক উত্তেজনা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, যাঁদের পারিবারিক ভাবে দুর্বল হৃৎপিণ্ডের সমস্যা রয়েছে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁদের আচমকা মৃত্যুর সম্ভাবনা তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। তেমনি যাঁরা ধূমপান ও সারা রাত ধরে মদ্যপান করেন, তাঁদের আচমকা মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে যথাক্রমে দুই এবং ছ’গুণ। তেমনি দুর্বল হৃৎপিণ্ড যাঁদের, তাঁদের অতিরিক্ত পরিশ্রম আচমকা মৃত্যুর সম্ভাবনা তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

গবেষণার কাজে যুক্ত থাকা এক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ‘‘প্রতিষেধক বর্ম হিসাবে কাজ করে। প্রতিষেধকের সঙ্গে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement