বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। ছবি: পিটিআই।
ভোটমুখী বিহারে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ঢালাও টাকা খরচ করছে জেডিএউ-এর নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। তবে শুধু নীতীশ কুমারেরাই নন, ভোটের মুখে এমন খরচ করার প্রবণতা দেখা গিয়েছে অতীতেও। গত দু’বছরে বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের আগে প্রায় ৬৭,৯২৮ কোটি টাকা বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে ব্যয় করেছে সরকারগুলি। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে গত বছর মহারাষ্ট্রের ভোটের আগে। তার পরে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে বিহারে নীতীশের সরকার।
গত বছর মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন ছিল। গত লোকসভা ভোটে এনডিএ শিবির ধাক্কা খাওয়ার কয়েক মাস পরেই মহারাষ্ট্রের ওই নির্বাচন ছিল। সেখানে মহরাষ্ট্রের ‘মহাজুটি’ (মহারাষ্ট্রের এনডিএর শরিক দলগুলির জোট এই নামেই পরিচিত) সরকার ভোটারদের মন টানতে বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পে ২৩,৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। এর মধ্যে অন্যতম সে রাজ্যের মহিলা ভাতা ‘লাড় কী বহিন’ প্রকল্প এবং বিনা মাসুলের বিদ্যুৎ পরিষেবা। পরে ‘মহাজুটি’ পুনরায় সরকার গঠনের পরে দেখা যায়, মহিলা ভাতার খরচ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ‘লাড় কী বহিন’ প্রকল্পের জন্য সে রাজ্যের অন্য দফতরগুলির উপর চাপ তৈরি হচ্ছে, এমন অভিযোগ মাঝেমধ্যেই উঠে আসে।
সামনেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। সেখানেও নীতীশেরা ১৯,৩৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করছেন বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ অনুসারে, বিহারের রাজস্ব বাবদ আয়ের প্রায় এক তৃতীয়াংশ (৩২.৪৮ শতাংশ) ভোটের আগে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’র জন্যই ব্যয় হচ্ছে ১২,১০০ কোটি টাকা।
তবে এমনও অনেক রাজ্য রয়েছে, যেখানে ভোটের মুখে খুব বেশি খরচ করা হয়নি। বিহার এবং মহারাষ্ট্র— দুই রাজ্যেই ‘এনডিএ’ জোটের সরকার রয়েছে। গত বছর বিজেপির হাতে থাকা হরিয়ানাতেও বিধানসভা ভোট হয়েছে। সেখানে ভোটের আগে খুব বেশি খরচ না-করেও তৃতীয় বারের জন্য সরকার গঠন করতে পেরেছে বিজেপি। মোট রাজস্বের মাত্র ০.৪১ শতাংশ ভোটের আগে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় করেছে তারা।
২০২৩ সালের শেষ দিকে কংগ্রেসকে সরিয়ে ছত্তীসগঢ়ে সরকার গঠন করে বিজেপি। ওই সময়ে বিদায়ী সরকারও ভোটের আগে খরচ করেছিল রাজস্ব বাবদ মোট আয়ের মাত্র ০.৬৬ শতাংশ। গত বছর ঝাড়খণ্ডেও বিধানসভা নির্বাচন ছিল। ভোটে জিতে ফের সরকার গঠন করে হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। সে বছরও ভোটের আগে বিদ্যুতের মাসুলে ছাড় এবং মহিলাকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য রাজস্বের প্রায় ১৫.৯৫ শতাংশ খরচ করেছিল তারা। ২০২৩ সালে মধ্যপ্রদেশে পুনরায় নির্বাচিত হয় বিজেপি। ওই সময় ভোটের আগে তারা রাজস্বের প্রায় ১০.২৭ শতাংশ ব্যয় করেছিল বিভিন্ন প্রকল্পে।
রাজস্থানেও বিধানসভা ভোট ছিল ২০২৩ সালে। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন রাজস্থান সরকার ভোটের আগে ৬,২৪৮ কোটি টাকা খরচ করেছিল বিভিন্ন প্রকল্পে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিনা মাসুলের বিদ্যুৎ পরিষেবা এবং স্মার্টফোন বিলির প্রকল্প। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটে হারাতে হয়েছিল কংগ্রেসকে। ওড়িশাতেও গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে নবীন পট্টনায়েকের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিজেডি সরকার ২,৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। তবে তাদের পরাস্ত করে ওড়িশায় সরকার গঠন করে বিজেপি। গত দু’বছরে তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং দিল্লিতেও ভোট হয়েছে। তবে এই তিন জায়গায় ভোটের আগে যে ঘোষণাগুলি করা হয়েছিল, তার কোনওটিই নির্বাচনের আগে কার্যকর হয়নি। তিনটি জায়গাতেই ভোটের পরে সরকার বদল হয়ে যায়।