Rain

আরব সাগরের উষ্ণায়নই কি পাল্টাচ্ছে পশ্চিমের বর্ষা

স্বাভাবিক বর্ষাতেও এই বিপর্যয়ের পিছনে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু বদলের ইঙ্গিতই দেখছেন পরিবেশবিদ ও আবহবিজ্ঞানীরা।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০৪:৫৬
Share:

প্রবল বৃষ্টিতে মুম্বইয়ের পেডার রোডে নেমেছে ধস। বৃহস্পতিবার। পিটিআই

ঘূর্ণিঝড় নয়, নেহাতই বর্ষার বৃষ্টি! তাতেই দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বই রীতিমতো বিপর্যস্ত। কারণ, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল, ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ৩৩১ মিলিমিটার। পরিস্থিতি সামলাতে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৬টি দল। এ দিন বেলা বাড়তে বৃষ্টি একটু কমেছে। কিছু পরিবহণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তবে জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। কর্নাটকের উপকূলীয় জেলাগুলিতেও পরিস্থিতি সঙ্গিন। সেখানে বন্যা সতর্কতায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়েও প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এখনও পশ্চিমের উপকূলীয় রাজ্য ও মধ্য ভারতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে।

Advertisement

স্বাভাবিক বর্ষাতেও এই বিপর্যয়ের পিছনে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু বদলের ইঙ্গিতই দেখছেন পরিবেশবিদ ও আবহবিজ্ঞানীরা। এই প্রসঙ্গে গত ৭০ বছরের বৃষ্টির পরিসংখ্যানকেও তুলে ধরছেন তাঁরা। পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটেরিয়োলজির বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কোলের মতে, গত ৭০ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা ও মধ্য ভারতে অতিপ্রবল বৃষ্টি প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। ভারী বৃষ্টিও ধারাবাহিক ভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

মৌসম ভবনের তথ্যেও সেই ইঙ্গিতই মিলছে। তাদের হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৩৩১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল প্রবল ঝোড়ো হাওয়া। তবে এমন বৃষ্টির উদাহরণ আরও রয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ অগস্টও ৩৩১.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মুম্বইয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বকালের রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে ১৯৯৭ সালের ২৩ অগস্ট, ৩৪৬.২ মিলিমিটার। এর মাঝেও কোনও কোনও বছর এক দিনে দেড়শো-দু’শো মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তাতেই বারবার বানভাসি হয়েছে মুম্বই। এ বার সব থেকে খারাপ অবস্থা দক্ষিণ মুম্বইয়ের শহরতলির। বডালা, নায়ার হাসপাতাল চত্বরের অবস্থাও খারাপ। এরই মধ্যে টুইটারে একটি ভিডিয়ো ছড়িয়েছে যেখানে এক গুজরাতিভাষী ব্যক্তি জলমগ্ন মুম্বইয়ের রাস্তায় গাড়ি চলাচলকে ভেনিসের গন্ডোলার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

Advertisement

এই অতিপ্রবল বৃষ্টির সঙ্গে আরব সাগরের অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের সম্পর্কও টেনেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৭ সালে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব মাধবন রাজীবন-সহ এক দল ভারতীয় বিজ্ঞানী দাবি করেছিলেন, বঙ্গোপসাগরের তুলনায় আরব সাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি বেশি হচ্ছে এবং তার ফলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে এবং সেটাই বর্ষাকালে পশ্চিম ও মধ্য ভারতে অতিবৃষ্টি বাড়াচ্ছে। এই উষ্ণায়নের পিছনে কার্বন দূষণকেও দায়ী করেছেন তাঁরা।

একটি সূত্রের দাবি, বর্তমানে পশ্চিম উপকূলে আরব সাগরের তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি রয়েছে। তাই শুধু মুম্বই নয়, কর্নাটকের মতো পশ্চিমী রাজ্যেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। বিপর্যয় রুখতে কর্নাটকের উত্তর কন্নড় জেলার একটি বড় জলাধার থেকে প্রচুর জল ছাড়া হচ্ছে। তার ফলে নদীগুলিতে জল বিপদসীমায় পৌঁছেছে। উত্তর কন্নড়, দক্ষিণ কন্নড় ও উদুপি জেলায় পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ। ইতিমধ্যেই ওই জেলাগুলির বহু এলাকা জলমগ্ন। বিপর্যস্ত আশপাশের কয়েকটি জেলাও। বন্যাত্রাণে কর্নাটক সরকার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। মধ্য প্রদেশের উপরে পশ্চিম ভারতের প্রভাব ছাড়াও পূর্ব ভারত থেকে যাওয়া নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তগুলিও সমান ভাবে দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন