(বাঁ দিকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওয়াজ়িরিস্তানে সেনা কনভয়ে আত্মঘাতী হামলার নেপথ্যে ভারতের মদত রয়েছে বলে দাবি করেছিল ইসলামাবাদ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সেই বিবৃতি খারিজ করে পাল্টা বিবৃতি দিল ভারত। নয়াদিল্লির বিদেশমন্ত্রকের তরফে পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গত ২৮ জুন ওয়াজ়িরিস্তানে হামলার বিষয়ে পাক সেনার সরকারি বিবৃতি আমরা দেখেছি। সেই বিবৃতিকে আমরা অবজ্ঞার সঙ্গে খারিজ করছি। কারণ, সেটি অবজ্ঞারই যোগ্য।’’
ওয়াজ়িরিস্তানের হামলায় পাক সেনাবাহিনীর ১৩ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে আচমকা সেনা কনভয়ে ঢুকে পড়েছিল আত্মঘাতী জঙ্গি। মুহূর্তে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারদিক। এই ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহতও হয়েছেন অনেকে। পাক সেনার ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশন (আইএসপিআর)-এর বিবৃতি অনুযায়ী, এক মহিলা এবং দুই শিশুও এই হামলায় গুরুতর জখম। খাইবার পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজ়িরিস্তান জেলার মীর আলি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। সেনা কনভয়ের ভিতরে আত্মঘাতী হামলাকারীর গাড়ি ঢুকে পড়েছিল। কনভয়ের সামনের গাড়িটি এই গাড়িকে আটকায়। এর পরেই বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িটি সেনার একটি গাড়িতে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে এবং বিস্ফোরণ ঘটায়।’’ এই ঘটনায় আরও ২৯ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন জওয়ান এবং বাকিরা সাধারণ নাগরিক।
আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কোনও গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) ওই এলাকায় সক্রিয় বলে জানা গিয়েছে। পাক সেনার বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, হামলার নেপথ্যে ‘ভারতের মদতপুষ্ট জঙ্গি’রা রয়েছে বলে তাদের সন্দেহ। এই বিবৃতির পরেই ভারতের বিদেশমন্ত্রক পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, কিছু দিন আগেই দক্ষিণ ওয়াজ়িরিস্তানে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে হানা দিয়েছিল পাকিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনী। সেই অভিযানে ১১ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল দু’জন পাক জওয়ানেরও। তার পরেই সেনা কনভয়ে এই আত্মঘাতী হামলা। ইতিমধ্যে জঙ্গিদের খোঁজে ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। সেনা অত্যন্ত সক্রিয়। বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ সূচক ২০২৫ অনুযায়ী, পাকিস্তানে সন্ত্রাস হামলায় মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেই মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৪৮। ২০২৪ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১,০৮১।
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরেই তুলে আসছে ইসলামাবাদ। যদিও সে সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু পর পাকিস্তানকে সেই ঘটনায় দায়ী করে ভারত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়। ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে সেনা অভিযান চালায় নয়াদিল্লি, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি তাতে ধ্বংস করা হয়। তার পর টানা চার দিন দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে।