Donald Trump

ট্রাম্প বা জো, বদলের আশা কম বাণিজ্যে

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষির সময় ট্রাম্প ভারতের দিকে অত্যধিক শুল্ক চাপানোর অভিযোগ তুলে ‘ট্যারিফ কিং’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৭
Share:

ছবি এএফপি।

গুজরাতের অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই মোদী সরকারের কাছে অনুযোগ জানান। তাঁদের আর্জি, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে একটু বোঝানোর চেষ্টা করুন না!’’

Advertisement

কী বোঝাতে হবে? এক বছর হয়ে গেল, আমেরিকা ভারতকে বাণিজ্যের তালিকায় অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। গুজরাত-মহারাষ্ট্রের অলঙ্কার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। কারণ, এ দেশ থেকে রফতানি করা গয়নায় আমেরিকা আমদানি শুল্ক চাপাতে শুরু করেছে। ফলে আমেরিকার বাজারে ভারতের গয়না প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।

বুধবার দিনভর গোটা বিশ্বের সঙ্গে নয়াদিল্লির চোখও টিভির পর্দায়, আমেরিকার ভোটের ফলে। ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আমেরিকার মানচিত্রে রিপাবলিকানদের লাল রঙ বেশি দেখাচ্ছে, নাকি ডেমোক্র্যাটদের নীল রং, নর্থ ব্লকের অর্থ মন্ত্রক থেকে উদ্যোগ ভবনের বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের নজরও সে দিকে। কিন্তু মোদী সরকারের অন্দরমহল মনে করছে, বাইডেন আসুন বা ট্রাম্প থেকে যান, আর্থিক বা বাণিজ্য নীতিতে বিশেষ রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে রেকর্ড সুস্থ, ৯ শতাংশের নীচে সংক্রমণের হার​

বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমেরিকার ভোট প্রচার দেখে যেটুকু ইঙ্গিত মিলেছে, তাতে বাইডেনের আমেরিকার অর্থনীতি সম্পর্কে অবস্থান ট্রাম্পের থেকে আলাদা কিছু নয়। ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বললে, বাইডেনও ‘বাই আমেরিকান’ বলছেন। দেশের শিল্পে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলছেন। ফলে বাইডেন ক্ষমতায় এলেও ট্রাম্পের মতোই রক্ষণশীল নীতি নেবেন বলেই মনে হচ্ছে।”

দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনেক দিন ধরেই দর কষাকষি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী আমেরিকায় গিয়ে ‘হাউডি মোদী’ বা এ দেশে ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর পরেও বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। অনেকে ভেবেছিলেন, ট্রাম্প থাকতে থাকতেই ভোটের আগে ছোট মাপের বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলা হবে। কিন্তু তা হয়নি। বাইডেন এলে কি আবার নতুন করে দর কষাকষি শুরু করতে হবে?

বাণিজ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে আমেরিকার সরকার বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে পরিবেশের সুরক্ষা, শ্রম আইন মেনে চলার উপরে আরও বেশি জোর দেবে। ফলে তা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির জন্য নতুন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠবে।” ট্রাম্পের জমানায় এ দেশ থেকে রফতানির উপরে শুল্ক চেপেছে। বাইডেন এলে কি হাল বদলাবে? ওই আমলার যুক্তি, ‘‘১৯৯১ থেকে যদি পরিসংখ্যান দেখি, আমেরিকায় যে পার্টিই ক্ষমতায় আসুক, ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্কের হার মোটামুটি একই থেকেছে।’’

আরও পড়ুন: মাথাব্যথা ভিড় নিয়েই, কোন রুটে কত লোকাল দরকার, বৈঠকে রেল-রাজ্য

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষির সময় ট্রাম্প ভারতের দিকে অত্যধিক শুল্ক চাপানোর অভিযোগ তুলে ‘ট্যারিফ কিং’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। রফতানিতে ভারতের ভর্তুকির নীতিতেও সমালোচনা করেছেন। মোদী সরকারও দেশীয় শিল্পকে আগলাতে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর নীতি নিয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে মোদী সরকার বাণিজ্য চুক্তি চাইলেও স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের মতো আরএসএসের সংগঠন স্বদেশি নীতিতে জোর দেওয়ার পক্ষে।

সরকারি কর্তারা বলছেন, বাণিজ্য চুক্তি না-হলেও ভোটের আগে ভারত-আমেরিকার মধ্যে আরও একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এটি তৃতীয় বাণিজ্য চুক্তি। দু’দেশই মনে করছে, এর ফলে নিরাপত্তা ও আর্থিক ক্ষেত্রে সমন্বয় আরও বাড়বে। পরিসংখ্যান বলছে, ভারত থেকে আমেরিকায় মণিরত্ন-অলঙ্কার, বস্ত্র-পোশাক, ওষুধ, কৃষি ও সামুদ্রিক পণ্য এবং যন্ত্রাংশই বেশি রফতানি হয়। আমেরিকা থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় অশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক বস্তু। ট্রাম্প সরকার বাণিজ্যে অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে ভারতকে বাদ দেওয়ায় শুধু গয়না-অলঙ্কার নয়, বস্ত্রশিল্পের মাথাতেও হাত পড়েছে। কারণ এ দেশ থেকে বস্ত্র রফতানির চার ভাগের এক ভাগই আমেরিকায় যায়। বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, শুল্ক বেশি চাপছে বলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনামের তুলনায় ভারত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বাইডেন এলে সে ক্ষেত্রে আশার আলো দেখা যাবে, এমন সম্ভাবনা কম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement