১১ দিন পর পুলওয়ামার বদলা নিল ভারত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে বোমাবর্ষণ করে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিল বায়ুসেনা। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এই অভিযানের প্রস্তুতি যদিও চলছিল গত ১১দিন ধরে। তবে মঙ্গলবার সারাদিন যা ঘটল, একনজরে দেখে নিন। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
এ দিন ভোর ৩টে ৪৮ থেকে ৩টে ৫৫ মিনিট পর্যন্ত মুজফ্ফরাবাদে বোমাবর্ষণ করে ভারতীয় বায়ুসেনা। চকোটিতে বোমাবর্ষণ চলে ৩টে ৫৮ মিনিট থেকে ৪টে ৪ মিনিট পর্যন্ত। ৩টে বেজে ৪৫ মিনিট থেকে ৩টে বেজে ৫৩ মিনিট পর্যন্ত বোমাবর্ষণ হয় বালাকোটে।
নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে বায়ুসেনা পাকিস্তানে প্রবেশ করে বলে প্রথম খবর আসে পাকিস্তান থেকেই। ভোর ৫টা ১২ মিনিটে তা নিয়ে টুইট করেন পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর। ভারতীয় বায়ুসেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করেছে বলে জানান তিনি।
এ দিন সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে বায়ুসেনা সূত্রে অভিযানের কথা সামনে আনা হয়। জানানো হয়, ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ বোমাবর্ষণ করে নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন জঙ্গিঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বালাকোট, চকোটি এবং মুজফ্ফরবাদে জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করতে ১২টি মিরাজ ২০০০ বিমান থেকে ১ হাজার কেজি বোমাবর্ষণ করা হয়েছে বলে জানায় বায়ুসেনা।
ভারতের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে, সকাল সাড়ে ৯টায় সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অংশ। আত্মরক্ষায় নিজের এলাকায় বোমাবর্ষণে বাধা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে দিল্লিতে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। সকাল ১০টা ৬ মিনিটে রেডিয়ো পাকিস্তান জানায়, ইসলামাবাদে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি।
সকাল ১১টা নাগাদ গুজরাতের কচ্ছ সীমান্তে একটি পাকিস্তানের ড্রোন নজরে আসে সেনার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেটাকে গুলি করে নামানো হয়।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সকাল সাড়ে ১১টায় সাংবাদিক বৈঠক করেন ভারতীয় বিদেশ সচিব বিজয় গোখেল। তিনি জানান, ফের আত্মঘাতী হামলার ছক কষছিল জইশ। তাই আগেভাগে তাদের রুখতে পদক্ষেপ করা হয়। বালাকোটে জইশের বৃহত্তম প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বোমাবর্ষণের সময় বালাকোটের ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে জইশ চাঁই মৌলানা মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজহার ওরফে উস্তাদ ঘৌরি হাজির ছিল। বায়ুসেনার অভিযানে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে সাধারণ মানুষ হতাহত হননি বলে নিশ্চিত করেন বিজয় গোখেল।
দুপুর সাড়ে ১২টায় সেনাপ্রধান বিপিন রওয়াতের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বায়ুসেনার অভিযানের পর সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখেন তাঁরা।
দুপুর পৌনে ১টায় ভারতের সমালোচনায় মুখে খোলেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। ভারত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেছে এবং আত্মরক্ষার তাগিদে পাকিস্তান তার উপযুক্ত জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নিরাপত্তা বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিকেল ৪টে নাগাদ পাকিস্তানের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী আলি মহম্মদ খান জানান, নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেছে ভারত। অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বুধবার সংসদে যৌথ অধিবেশন ডাকা হয়েছে।
বিকেল ৫টায় দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু ভবনে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠক বসে। রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলির পাশাপাশি সেখানে হাজির ছিলেন গোলাম নবি আজাদ, ওমর আবদুল্লা।