Iron Dome

দেশে তৈরি ‘আয়রন ডোম’ প্রথম পরীক্ষায় সফল, ভারতের আকাশ নিশ্ছিদ্র করবে ‘মিশন সুদর্শন চক্র’

ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীদের তৈরি ত্রিস্তরীয় সুসংহত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পোশাকি নাম, ‘ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স ওয়েপন সিস্টেম’ বা আইএডিডব্লিইউএস। সম্প্রতি তার সফল প্রাথমিক পরীক্ষা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৯
Share:

প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হল গত ২৩ অগস্ট। —প্রতীকী চিত্র।

হপ্তা পেরোতেই সাফল্য। লক্ষ্য ছিল, ভারতের কৌশলগত সামরিক-বেসামরিক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিকে আকাশপথে শত্রুর সম্ভাব্য হামলা থেকে রক্ষা করা। এই উদ্দেশ্যে গত ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন ‘মিশন সুদর্শন চক্র’ কর্মসূচির। আর দেশীয় নকশা এবং প্রযুক্তিতে নির্মিত সেই ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)-র প্রাথমিক সফল পরীক্ষা হল গত ২৩ অগস্ট। ওড়িশার চাঁদিপুর উপকূলের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জে।

Advertisement

‘ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা’ (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন বা ডিআরডিও)-র বিজ্ঞানীদের তৈরি সেই সুসংহত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পোশাকি নাম ‘ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স ওয়েপন সিস্টেম’ (আইএডিডব্লিইউএস)। ইজ়রায়েলের আয়রন ডোমের মতোই বহুস্তরীয় এই নিরাপত্তা বলয় শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান এবং ড্রোনের হামলা থেকে ভারতের আকাশকে নিরাপদ রাখবে বলে দাবি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। বহুস্তরীয় এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে ‘কুইক রিঅ্যাকশন সারফেস টু এয়ার মিসাইল’ (কিউআরএসএএম)। ‘অ্যাডভান্সড ভেরি শর্ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ (ভিএসএইচওআরএডিএস) এবং ‘ডায়রেক্টে এনার্জি ওয়েপন’ (ডিইডব্লিউ)।

ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ‘কুইক রিঅ্যাকশন’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে সংক্ষেপে কিউআরএসএএম বলা হয়। এটি দ্রুত রাডারের মাধ্যমে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমানকে চিহ্নিত করতে পারে। তার পর দূর থেকেই আকাশে সেটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ভিএসএইচওআরএডিএস মূলত, নিচু দিয়ে ওড়া শত্রুসেনার ড্রোন কাছাকাছি এলে সক্রিয় হয়ে ওঠে। রাডার ফাঁকি দিয়ে হামলাকারী ঘাতক ড্রোন নিশানার কাছে চলে এলেও তাকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। অন্য দিকে, ডিইডব্লিউ হল একটি অ-প্রথাগত অস্ত্র। এর সাহায্যে লেজ়ার, মাইক্রোওয়েভ বা পার্টিকল বিমের (কণা রশ্মি) মতো কেন্দ্রীভূত শক্তিকে সরাসরি শত্রুর হামলা প্রতিরোধে কাজে লাগানো যায়। এক কণাও বিস্ফোরক ব্যবহার না করে আকাশেই ছাই করে দেওয়া যায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট, যুদ্ধবিমান বা ড্রোন!

Advertisement

অপারেশন সিঁদুর-এর সময় পাক হামলাকে সফল ভাবে রুখে দিয়েছিল ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেই সময় থেকেই এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য খবরের শিরোনামে রয়েছে। আর সেই হাতিয়ারগুলির মধ্যে অবশ্যই শীর্ষস্থানে থাকবে রাশিয়ার দেওয়া ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর নাম। বর্তমানে ডিআরডিও ও ভারত ইলেকট্রনিক্স কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘প্রকল্প কুশ’-এ (পড়ুন প্রজেক্ট কুশ) কাজ করছে। এটি সফল হলে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর সমতুল্য হাতিয়ার পাবে ভারতীয় সেনা। অন্য দিকে, লেজ়ার নির্ভর ডিইডব্লিউ-এর পোশাকি নাম ‘সূর্য’। ৩০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই ‘পার্টিকল বিম’ প্রায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভারতের আকাশকে সুরক্ষা দিতে পারবে। এটির গবেষণা এবং উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে ডিআরডিও-র ‘লেজ়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজ়ি সেন্টার’। হামাস, হিজ়বুল্লা, হুথি এবং ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় ইজ়রায়েলি আয়রন ডোমের লেজ়ার-অস্ত্র ‘আয়রন বিম’-এর কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছিল। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তেমন অস্ত্র চলে আসবে ভারতীয় সেনার হাতেও।

মারণ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কম হলেও কম উচ্চতায়, স্বল্প পরিসরে এবং সীমিত সময়ে আকাশ হামলা ঠেকাতে ‘অ্যাডভান্সড ভেরি শর্ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ (ভিএসএইচওআরএডিএস)-এর ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি ওজনে হালকা এবং দ্রুত বহনক্ষম। এমনকি, প্রয়োজনে সেনারা কাঁধে করে এটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারেন। ভিএসএইচওআরএডিএস-এর আসল বৈশিষ্ট্য সেকেন্ডের ব্যবধানে লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত এবং নিশানা করায়। ত্রিস্তরীর ‘ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স ওয়েপন সিস্টেম’-এ রয়েছে ‘অ্যাকটিভ এয়ারি ব্যাটরি সার্ভিল্যান্স রাডার’ এবং ‘অ্যাকটিভ এয়ারি ব্যাটরি মাল্টিফাংশনাল রাডার’। যা ৩৬০ ডিগ্রির মধ্যে থাকা নিচু দিয়ে ও়ড়া ড্রোন, বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করতে এবং দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে সে বিষয়ে সজাগ করতে পারে।

গত বছর ভারতীয় ফৌজের হাতে ‘আকাশতির’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটি তুলে দেয় ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড। জনপ্রিয় ইজ়রায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের আদলে এটি তৈরি করেছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। মূলত স্বল্পপাল্লার ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে এর নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া শত্রুর যুদ্ধবিমানের রিয়্যাল-টাইম তথ্য দিতে পারে ‘আকাশতির’। বস্তুত, ভিএসএইচওআরএডিএস তারই উন্নততর সংস্করণ। ‘অপারেশন সিঁদুর’ পর্বে ডিআরডিও-র ‘আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্রও পাক আকাশ হামলার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৭০ কিলোমিটার। গতি, ২.৫ ম্যাক। অর্থাৎ শব্দের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি! এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নির্মাণকারী সংস্থা ‘ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড’ (বিডিএল) ‘মিশন সুদর্শন চক্র’-তে শামিল রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement